আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের মালিক হতে দেব না
যুক্তরাষ্ট্রের হুশিয়ারি
ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ইসরায়েলপন্থি খ্রিস্টানদের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এমন সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন যখন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। ক্রিস্টিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েল (সিইউএফআই)-এর সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে মাইক পেন্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরোধিতা চালিয়ে যাবে। আমেরিকা কখনো তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধের জেরে পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ইরানের আংশিক সরে আসায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ ঘটনায় অবিলম্বে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পরাশক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রোববার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ঐতিহাসিক পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তেহরান। ৭ জুলাই থেকে এটি কার্যকরের কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, তেহরানের এভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের একটাই উদ্দেশ্য। আর তা হচ্ছে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা। অথচ পশ্চিমা নেতারা এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার বাড়ানো মাত্রই দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অঙ্গীকার করেছিল।
অন্যদিকে তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির গতিবিধি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে সরে এসে তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আইএইএ সজাগ রয়েছে। ইরানে থাকা সংস্থাটির পরিদর্শকরা শিগগিরই তাদের পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাঠাবেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা সংস্থার সদর দফতরে এ প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধের জেরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উন্নীতের ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পরমাণু চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে ইরান। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে এই মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি ছিল তেহরানের। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি চুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ইউরোপকে ৬০ দিনের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার পর এই ঘোষণা এলো।
চুক্তি রক্ষায় তেহরানের অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে ইরানি উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকশি অভিযোগ করেছেন, ইউরোপ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানকে রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে প্রতি ৬০ দিন পর পর নিজেদের প্রতিশ্রুতি থেকে কিছুটা সরে আসার হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান তীব্র উত্তেজনার মধ্যে এমন ঘোষণা এলো।
২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয়। এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো এ সমঝোতা বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালনে ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে এ বছরের মে মাসে তেহরান চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
সেই সময়সীমা শেষে নতুন করে চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার ঘোষণা এলো। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
"