আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

কেরালার সব আসনে ভোট অনুষ্ঠিত

রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লড়াই নয় এই নির্বাচন। পুরো কেরালা এবারের লোকসভা ভোটে যেন তারই একটা মহড়া হতে চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজ্যের ২০টি আসনেই এক দফায় ভোট অনুষ্ঠান করিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শান্তিতে ভোট করানোর জন্য কমিশন বেশ কয়েক কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীর পশাপাশি লাগোয়া তামিলনাড়–, কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে হাজার পাঁচেক পুলিশও নিয়ে আসে। যুযুধান রাজনৈতিক তিন শিবিরও তাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি যথাসম্ভব সেরে ফেলে গত সোমবার রাতের মধ্যে। প্রচারের শেষ লগ্নে রাজধানী তিরুবনন্তপুরমসহ রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটলেও কমিশন ও প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার ভোটের দিন কোনো রকম গোলমাল বরদাস্ত না করার ব্যাপারে আগেই হুশিয়ারি দেন।

এবারের ভোট কার্যত বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি এই তিন শিবিরের কাছেই অ্যাসিড টেস্ট বলে মনে করা হচ্ছে। সুদূর দক্ষিণের এই মালয়ালি রাজ্যে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিধানসভার ভোটে নিয়ম করে পালাবদলের রীতি চালু হয়ে রয়েছে। সেই রীতির জেরেই ২০১৬ সালের ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সচিবালয়ের গদি দখল করে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামজোট। আগামী ২৩ মে ভোটের ফল বের হওয়ার ঠিক দুই দিন পর ২৫ মে বর্তমান পিনারাই বিজয়ন সরকার তৃতীয় বছরে পা দেবে। তিন বছর ধরে সরকার চালানোর গর্বকে উৎসবে পরিণত করার আগাম পরিকল্পনাও ছকে রেখেছে সিপিএম। কিন্তু ভোটের ফল আশানুরূপ না হলে সেই গুড়ে বালি পড়ার সমূহ আশঙ্কাও রয়েছে। তাই সরকারের বর্ষপূর্তি উৎসব নিয়ে এখনই আগ বাড়িয়ে কোনো ঘোষণার ঝুঁকি নিচ্ছে না তারা। আসলে এবার ভোটের যে উত্তাপ কেরালাজুড়ে ছড়িয়েছে তা অতীতে রাজ্যবাসী কখনো উপলব্ধি করেনি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঝক্কি সামলেও কংগ্রেস পরিচালনাধীন ইউডিএফ জোট ১২টি আসন দখল করে। বামেরা পেয়েছিল বাকি আটটি। এবার কংগ্রেস কেন্দ্র বা রাজ্যের কোথাও ক্ষমতায় নেই। ফলে তারা এবার বাড়তি অ্যাডভান্টেজ নিয়েই ভোটের লড়াই শুরু করেছিল। আর তাদের সেই অ্যাডভান্টেজের মাত্রা কয়েক কদম বাড়াতে সাহায্য করেছে রাজ্য থেকে স্বয়ং রাহুল গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি।

ইউডিএফ জোটে এই অ্যাডভান্টেজের সঙ্গে সবরীমালা, গত বছরের বিধ্বংসী বন্যা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক হানাহানির মতো ইস্যুগুলোতে বামেরা অনেকটা ব্যাকফুটে। তাই গতবারের জেতা আসন সংখ্যা ধরে রাখাই এবার তাদের প্রধান এবং প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। সেইসঙ্গে রয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে দলের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার মতো উদ্বেগ। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর দলের যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে অগতির গতি হিসেবে গোটা মার্কসবাদী নেতৃত্ব এখন কেরালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাড়তি কদরও পাচ্ছেন এই কারণে। পিনারাই বিজয়ন-কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণাতরা যদি এই ভোটে তুখ থুবড়ে পড়েন তাহলে দলের অন্দরে তাদের সেই কদর ধরে রাখাও নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে। সব মিলিয়ে তাই কেরালার বাম শিবির এবারের ভোট নিয়ে বেজায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

কেন্দ্রে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি সরকারের ফিরে আসা ঠেকাতে দিল্লিতে কংগ্রেসকে দরকার রাহুলের দলের এই সেøাগানে এবার কেরালার মুসলিম ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের তরফে যথেষ্ট সাড়া মিলেছে। অন্তত প্রচার পর্বে সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে রাজ্যের নানা জায়গায়। এই দুই অংশের ভোট ব্যাংকের অনেকটাই বামেদের দখলে ছিল বলে তারা এতদিন নিশ্চিত ছিল। কিন্তু এবার সংঘ পরিবারের তৈরি কড়া হিন্দুত্বের আবহে আতঙ্কিত হয়ে রাজ্যের দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইউডিএফ জোটের দিকেই বেশি ঝোঁকার ইঙ্গিত দিয়েছে নানা সমীক্ষায়। তবে এসব সত্ত্বেও কংগ্রেস যদি নানা কেন্দ্রে অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও অন্তর্ঘাতের কারণে শেষমেশ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলে সেটা কেবল দল নয়, রাহুল গান্ধীর কাছে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে।

সবরীমালা কা-কে সামনে রেখে বিজেপি এবার কেরালা দাঁত ফোটাতে মরিয়া মনোভাব নিয়ে লড়াই করছে। তিরুবনন্তপুরম, পাথনামথিট্টা, ত্রিশুলের মতো কয়েকটি আসনে তারা বিশেষভাবে জোরও দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহসহ দলের তাবড় শীর্ষস্থানীয় নেতা বারবার গিয়েছেন প্রচারে। আর চিরাচরিত বাম-কংগ্রেস নয়, এবার যে তারা তৃতীয়পক্ষ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ের অন্যতম কুশীলব হিসেবে রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ার তাগিদে কেরালা খাতা খুলতে এবার মরিয়া গেরুয়া শিবির। এখন দেখার, সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী তিন শিবিরই নিজেদের অঙ্ক মিলিয়ে কোন পক্ষ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সমীক্ষকদের সঠিক বা ভুল প্রমাণ করতে পারে শেষ পর্যন্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close