আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২২ মার্চ, ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এখন বিশ্বের আদর্শ

জাসিন্ডা আরর্ডান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে। ১৮৫৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তার বয়স মাত্র ৩৭ বছর।

১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া আরডার্নের বেড়ে ওঠা মুরুপাড়া নামে নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহরে। যেখানে শিশুদের পায়ে দেওয়ার মতো জুতা ছিল না, এমনকি দুপুরে তারা খাবারও পেত না। এই ঘটনাই তাকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে। উচ্চমাধ্যমিক শেষে আরডার্ন পড়াশোনা করেন যোগাযোগ বিদ্যায়। তার আগে ১৭ বছর বয়সেই যুক্ত হন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির রাজনীতিতে। স্নাতক শেষ করে আরডার্ন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্যের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৫ সালে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। আড়াই বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রীসভার দফতরে চাকরি করেন। ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ওয়েলথের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেড়িয়েছেন আলজেরিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল, জর্ডান ও লেবাননে।

২০০৮ সালে আরর্ডান লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও ১৩ হাজার ভোটে হেরে যান। কিন্তু দেশটির সংবিধানিক নিয়মে তিনি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান। ২৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নেন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে।

২০১৭ সালে লেবার পার্টির উপপ্রধান নির্বাচিত হন আরডার্ন। নির্বাচনের দুই মাস আগে দলটির প্রধান পদত্যাগ করলে সেই ভারও চাপে তার কাঁধে। নির্বাচনী প্রচারে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হন আরডার্ন।

তাকে নিয়ে এ সময় দেশটিতে জনপ্রিয়তার যে ঢেউ উঠে, তা পরিচিত ‘জেসিডামেনিয়া’ নামে।

মাত্র দু’মাসের নেতৃত্বে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাই দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করেন আর্ডার্ন। ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। নিউজিল্যান্ডের ১৫০ বছরের ইতিহাসেও তিনি সবচেয়ে কম বয়সী সরকার প্রধান।

আর্ডার্ন সমকামী বিবাহের সমর্থক। জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকিত। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের সরকার হবে সহানুভূতিশীল। ২০১৮ সালে ‘ফোর্বসের পাওয়ার উইমেনের’ তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি। আছেন টাইম ম্যাগাজিনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও। টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডকে বেছে নিয়েছেন তিনি সঙ্গী হিসেবে। ২০১৮ সালের ২২ জুন বেনজির ভুট্টোর পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বকালে সন্তানের জন্ম দেন আরর্ডান। এজন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি।

বিশ্বে প্রথমবার কোনো প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে সন্তান নিয়ে বক্তব্য দিতে যান। তিনি জেসিন্ডা আরর্ডান। গত বছর নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে অংশ নিয়ে আরর্ডান বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। বক্তব্য দেয়ার সময় সন্তান ছিল সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে।

ক্রাইস্টচার্চে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার পর জেসিন্ডা আর্ডার্নকে নতুন করে চেনে বিশ্ব। এই ঘটনার অভিযুক্তকে কোনো কার্পণ্য না করেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। দ্রুত অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। মুসলমানদের উদ্দেশ্যে জানান, নিউজিল্যান্ড মোটেও এমনটা নয়। এই দেশে তারা স্বাধীনভাবেই থাকতে পারবে। জেসিন্ডা আরর্ডান ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন নিহতদের স্বজনদের কাছে। তাদের জড়িয়ে ধরছেন, সমব্যাথী হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, মুসলমানদের সঙ্গে একাত্মতার প্রকাশ হিসেবে তিনি একাধিক দিন হিজাব পরে বেরিয়েছেন।

১৯ মার্চ সংসদে বক্তব্য দেন আরর্ডান। শুরুতেই সবাইকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোন্ধন করেন তিনি। জানান ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় অভিযুক্তের নামও তিনি কখনও মুখে আনবেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close