আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০১ জানুয়ারি, ২০১৯

অস্থিরতা কমলেও ছিল সংঘাতের শঙ্কা

২০১৮ সালে কোরিয়া উপদ্বীপজুড়ে কমেছে অস্থিরতা, সিরিয়ায় থিতিয়ে এসেছে গৃহযুদ্ধ; তবুও শান্ত হয়নি বিশ্ব। উল্টো আরো নানা দিক দিয়ে বেড়েছে পরাশক্তিদের মুখোমুখি অবস্থান।

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার টানাপড়েন, হরমুজ প্রণালিতে ইরান এবং কের্চ প্রণালিতে ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনা, সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি করা নিয়ে একেক দেশের একেক অবস্থান, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা- নিয়ে তুরস্ক-সৌদি আরবের সংঘাতসহ এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের এমন ঠোকাঠুকি চলেছে সারা বছরজুড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংঘাতের দামামা আর নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে হাজির হচ্ছে আরো একটি বছর।

সোভিয়েত আমলে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার হুমকি ও পারমণবিক অস্ত্রভা-ার বাড়ানোর ঘোষণায় রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে ঝুঁকি বেড়েছে ইউরোপের। দক্ষিণ চীন সাগরে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের রণসজ্জাও বাড়িয়েছে আতঙ্ক। ইরানের ওপর পুরনো নিষেধাজ্ঞা বহাল করে, তাদের তেল রপ্তানি বন্ধ করার হুমকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে নতুন মাত্রার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

ওদিকে, ইয়েমেন সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা নয় বরং আরব অঞ্চলের দুই শক্তিধর দেশের মর্যাদার লড়াইয়ের মঞ্চে পরিণত হওয়ায় বেড়েছে অনিশ্চয়তা। বছরজুড়েই আর্তনাদ, আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়েছে ইয়েমেনের। প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে দেশটি পৌঁছে গেছে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। সেখানে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৮ ডিসেম্বর থেকে বহুপ্রতিক্ষীত যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও প্রায়ই তা লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

২০১৮-এর অন্যতম আলোচিত ঘটনা খাশোগি হত্যাকা- নিয়ে এবছর শুধু তুরস্কই নয়, পশ্চিমা আরো কিছু দেশ, সৌদি আরবের সঙ্গে যাদের বহুদিনের রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক সম্পর্ক, তারাও বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিই বদলে দেওয়ার পট প্রস্তুত করেছে এ হত্যাকা-।

অন্যদিকে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী প্রভাব আরো সুসংহত করেছে রাশিয়া ও চীন। সিরিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও তারা কয়েক বছর ধরে নিস্ক্রিয় দ্বিতীয় নৌবহর পুনঃপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে নতুন কৌশলের ইঙ্গিত দিয়েছে।

কিউবায় ক্যাস্ত্রো যুগের অবসান তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন আর আশঙ্কার দোলাচলে ফেলেছে, জন্মের পর থেকেই যারা নিজেদের নেতা হিসেবে দেখে এসেছে ক্যাস্ত্রো ভাইদের। সেই যুগের অবসানে অনেকেই আসন্ন ভবিষ্যতের রূপরেখা কীভাবে আঁকবে তা নিয়ে হয়েছে দ্বিধাগ্রস্ত। প্রশ্ন জেগেছে, কোন পথে যাচ্ছে কিউবা?

হোয়াইট হাউজে প্রথম বছরের তুলনায় দ্বিতীয় বছরে প্রতিকূলতা কাটিয়ে কিছুটা গুছিয়ে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পেয়েছেন কিছু সফলতাও। তারপরও বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। বছরজুড়ে নানা বিতর্কে তিনি যেমন নাজেহাল হয়েছেন, তেমনি তার বিতর্কিত নানা পদক্ষেপও ঘরে-বাইরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। আবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের উত্থানও চাপে ফেলেছে তাকে।

গতবছরের মতো ব্রেক্সিট নিয়ে এ বছরও অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও সফলতার শিখরে পৌঁছতে পারেননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়া এখনো বাকি।

ফেইসবুক থেকে তথ্য চুরি করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়টিও ছিল এ বছরের আলোচিত ঘটনা। ওই কেলেঙ্কারির হাত ধরে একদিনে শেয়ার বাজার থেকে রেকর্ড ১০৯ বিলিয়ন ডলার হারায় ফেইসবুক।

ক্যান্সার চিকিৎসায় কীভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো যায় তার পদ্ধতি আবিষ্কার, লেজার গবেষণায় সাফল্য এবং বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু ছিল এবছর বিজ্ঞানপ্রযুক্তির অন্যতম আলোচিত বিষয়। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতায় নোবেল জয়ী অং সান সু চিকে নিয়ে তীব্র সমালোচনাও চলেছে সারা বছরজুড়ে।

প্রতিবছরের মতো এবারও বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে পৃথিবীর মানুষকে; ছিল ভূমিকম্প, বন্যা, সুনামি। সেইসঙ্গে ঘটেছে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা। যা বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আগের বছরের মতো এবছরও ঘটেছে সন্ত্রাসী হামলা। এতেও বিশ্ব হারিয়েছে বেশ কিছু মানুষ।

তাছাড়া, ঘটনাবহুল এ বছরে রাজপরিবারের দুটো জমকালো বিয়ে ছাড়াও এমন আরো নানা চমকপ্রদ ও ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনা ঘটেছে।

তবে বছরজুড়েই ট্রাম্পের নানা কর্মকা-ে কখনো ইতিবাচক কখনো বা নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হয়েছে দেশে-বিদেশে সর্বত্র। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মৈত্রীর সুবাতাস দিয়ে শুভ সূচনা হয়ে বছরের শেষ দিকে মেক্সিকো প্রাচীরের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ট্রাম্পের একগুঁয়েমিতে খোদ যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আংশিক অচল হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close