আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

রাফায়েল চুক্তির বৈধতা দিলেন ভারতীয় আদালত

ভারতের বহুল আলোচিত যুদ্ধবিমান ক্রয় সংক্রান্ত রাফায়েল চুক্তিতে তদন্তের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এতে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শীর্ষ আদালত। গতকাল শুক্রবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন।

রাফায়েল মামলা খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেন, যুদ্ধবিমান কেনার প্রযুক্তিগত এবং পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এ ছাড়া এমন কোনো তথ্যগত প্রমাণ আমরা খুঁজে পাইনি, যাতে মনে হয় যে কাউকে বেআইনিভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়। দাবি উঠেছিল, আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের। গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রের কাছে রাফায়েলের দাম সংক্রান্ত তথ্য জানতে চান সুপ্রিম কোর্ট। টানা শুনানির পর গতকাল শুক্রবার চূড়ান্ত রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কতগুলো যুদ্ধবিমান লাগবে, তার গুণমান বা প্রযুক্তিগত বিষয় কী হবেÑ সেসব বিষয় আদালতের বিচার্য বিষয় নয়।

এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। রায়ের পর তিনি বলেন, ‘এই রায় ভুল। কোনো ডিল বা চুক্তি নিয়ে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ উঠলে আদালতের উচিত তার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু আদালত তা করলেন না।’

যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো ত্রুটি বা গলদ খুঁজে পাননি আদালত। অফসেট পার্টনার হিসেবে অনিল আম্বানির সংস্থা রিলায়েন্সকে চূড়ান্ত করার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, অফসেট পার্টনার ঠিক করেছে বরাতপ্রাপ্ত ফ্রান্সের সংস্থা দাসো এভিয়েশন। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাও ঠিক নয়। তবে প্রশান্ত ভূষণ জানাচ্ছেন অন্য কথা। তিনি জানান, এয়ার ফোর্স জানিয়েছিল কমপক্ষে ১২৬টি যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। কিন্তু মোদি ফ্রান্সে গিয়ে ৩৬টি যুদ্ধবিমানের চুক্তি করলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াও সঠিকভাবে মানা হয়নি। দামও মোদি নিজে বাড়িয়ে দিয়েছেন।

অফসেট পার্টনার প্রসঙ্গে প্রশান্ত ভূষণের যুক্তি, চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছেÑ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অফসেট পার্টনার ঠিক করতে পারবে না দাসো। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখেই দাসো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিল করা খামে শীর্ষ আদালতে তথ্য জমা দিয়েছিল সরকার। সেটা কেউ দেখতে পায়নি। সরকার কী তথ্য দিয়েছিল আর আদালত কী বুঝেছে, তা তারা দু’পক্ষই জানে।’ রাফায়েল নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তো বটেই, অন্য বিরোধীরাও লাগাতার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তুলোধুনা করেছে। এমনকি, সাম্প্রতিক পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিজেপিবিরোধী প্রচারে রাফায়েলকে হাতিয়ার করেছেন রাহুল গান্ধী। সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে শীর্ষ আদালতের এই রায়ে বিরোধীদের সেই অস্ত্র কিছুটা হলেও ভোঁতা হলো বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

কংগ্রেসসহ বিরোধীদের অভিযোগ, কংগ্রেস আমলের খসড়া চুক্তি অগ্রাহ্য করে অনেক বেশি দামে অনেক কম যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারত। কংগ্রেসের করা চুক্তি মানলে ৭৯ কোটি রুপিতে পাওয়া যেত ১২৬টি রাফায়েল। সে জায়গায় ৫৯ হাজার কোটি রুপিতে মোদি সরকার কিনছে মাত্র ৩৬টি। আগের চুক্তিতে লাভবান হতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড, নতুন চুক্তিতে লাভ হচ্ছে অনিল আম্বানির বেসরকারি সংস্থার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close