আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

জামাল খাশোগির অন্তর্ধান

সৌদি আরবকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার ট্রাম্পের

সৌদি আরব সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে খুন করেছে, এমনটা প্রমাণিত হলে দেশটিকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস’র ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে তিনি এ অঙ্গীকার করেন। গতকাল রোববার চ্যানেলটিতে তার এ বক্তব্য সম্প্রচারের কথা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, আমরা জানি না খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে কিনা। তবে পরিস্থিতি খুব শক্তভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি প্রমাণ হয় যে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি আরব হত্যা করেছে তাহলে দেশটিকে মারাত্মক কঠিন মুখে পড়তে হবে। তবে দেশটির কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি স্থগিতের মানে দাঁড়াবে নিজেই নিজেকে শাস্তি দেওয়া। ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি স্থগিত করলে রাশিয়া ও চীন এর সুযোগ নিতে পারে। তাই দেশটিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে হাঁটতে চান তিনি। এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান খাশোগিকে খুনের নির্দেশ দিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, এমন তথ্য এখনো কারো কাছে নেই। তবে আমরা হয়তো খুঁজে বের করতে পারব। বাস্তবে এমনটা হয়ে থাকলে আমরা খুব মর্মাহত ও ক্রুদ্ধ হব।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, খাশোগির ঘটনায় তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি বাতিল করতে চান না। তিনি বলেছিলেন, এটা আমাদের জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনবে? এটা তুরস্কে ঘটেছে এবং আমাদের জানা মতে খাশোগি আমেরিকার নাগরিক নন।

এর আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক জামাল খাশোগির অন্তর্ধান নিয়ে কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, সৌদি আরবের সরকারবিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একটি বিপজ্জনক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।’ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, আমি প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য অপেক্ষা করছি। যেসব খবর সামনে আসছে তা মারাত্মক, খুবই মারাত্মক, ভয়াবহ উদ্বেগজনক। এই ঘটনা উদঘাটনে ফ্রান্স সম্ভব সবকিছু করতে চায়।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, সাংবাদিক জামাল খাশোগির অন্তর্ধানের বিষয়টি পরিষ্কার হলে ফ্রান্স একটি অবস্থান নেবে। তখন বিষয়টি নিয়ে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান, সৌদি রাজা সালমান বিন আবদুলআজিজ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলবেন।

এদিকে, সাংবাদিক জামাল খাশোগির অন্তর্ধানকে কেন্দ্র করে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সৌদি আরব। ইতোমধ্যে দেশটির বিনিয়োগ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খাশোগিকে হত্যার সময়কার অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং হাতে পেয়েছে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বিষয়টি নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাতে চাননি। তবে সিনেটরদের চাপের মুখে ট্রাম্প এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের তাগিদ দিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে খাশোগিকে হত্যার দায়ে ফেঁসে যেতে পারে সৌদি রাষ্ট্রযন্ত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়টি নিয়ে সৌদি সরকারকে জবাবদিহি করতে বলেছে। ফলে এ ইস্যুতে অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরেই জামাল খাশোগিকে খুনের বিষয়টি এখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়ায় সৌদি আরবের ‘বন্ধু’ ট্রাম্পও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। এ ইস্যুতে তার ওপর মার্কিন সিনেটরদেরও চাপ আছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ মাসের শেষ দিকে রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য দ্য ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ থেকে শুক্রবার নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও তাদের মিডিয়া পার্টনার সংবাদমাধ্যমগুলো। আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা সবাই বলছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট থেকে খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় কোনো গ্রহণযোগ্য জবাব না পাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন।

তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এমন কয়েকটি অডিও-ভিডিও রেকর্ড রয়েছে, যা থেকে এটা প্রমাণ করা সম্ভব, খাশোগিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে। কেননা, সেখানে যে কথাবার্তা শোনা গেছে, তা থেকে পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ অনুমান করা অসম্ভব কিছু নয়। প্রকাশে অনিচ্ছুক তুর্কি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ওই রেকর্ডিংয়ে কনস্যুলেটের ভেতরে আরবিতে কয়েকজনকে কথা বলতে শোনা যায়। কীভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন এবং খুন করা হয়েছে তা আপনি অডিওতে শুনতে পাবেন। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যকান্ড।

খাশোগির ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে তা পরিষ্কার করতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তুরস্কের প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিশদ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

খাশোগির তুর্কি বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, দূতাবাসে প্রবেশের সময় খাশোগির হাতে অ্যাপেলের একটি ঘড়ি ছিল। আর দূতাবাসে প্রবেশের সময় তিনি তার ফোনটি চেঙ্গিসের কাছে রেখে যান। তদন্তকারীরা তার ফোনটি পরীক্ষা করে দেখছে।

সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলেও মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুচিন তাতে এখনো যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। এই খবরে নতুন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এই তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে ট্রাম্প শুক্রবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি এই ভয়ংকর পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত সৌদি রাজা সালমানকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করবেন। এক রাজনৈতিক সমাবেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘সেখানে কি ঘটেছে আমরা তা খুঁজে বের করতে যাচ্ছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close