আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

জ্যাকেটে কী বার্তা ছিল, মুখ খুললেন মেলানিয়া

গত জুনের কথা। স্বামী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নামে অভিবাসী শিশুদের পরিবার-বিচ্ছিন্ন করে চলেছেন, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প সেই সময়েই টেক্সাসে অভিবাসী আটককেন্দ্র পরিদর্শনে যান। বিমানে ওঠার সময় তার গায়ে থাকা একটি জ্যাকেট ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিলো সে সময়। ওই জ্যাকেটে লেখা ছিল ‘আমি সত্যিই পরোয়া করি না... তোমরা?’ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সে সময় মেলানিয়ার জ্যাকেটের ওই ভাষ্য নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে। গুঞ্জন ওঠে, ওই ভাষ্য আদতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া বার্তা। তবে মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশামের মাধ্যমে মেলানিয়া তখন দাবি করেছিলেন, তিনি কোনো বার্তা দিতে চাননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য সে সময় দাবি করেছিলেন, তার স্ত্রী জ্যাকেটের ভাষ্যের মধ্য দিয়ে ‘ফেক নিউজ মিডিয়ার প্রতি বার্তা’ দিয়েছেন। ঘটনার ৩ মাসেরও বেশি সময় পর মেলানিয়াও প্রায় একই মন্তব্য করলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করলেন, ওই ভাষ্যের মধ্য দিয়ে ‘বামপন্থি মিডিয়া’ আর সমালোচকদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র আওতায় অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে চালানো আটক অভিযান ও মামলার জেরে এ বছরের মে মাস থেকে জুন পর্যন্ত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় দুই হাজারেরও বেশি শিশু। শিশুরা আইনের চোখে অপরাধী না হওয়ায় তাদের আটক মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ট্রাম্পের নেওয়া এ কঠোর নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মেলানিয়া। তিনি ছাড়াওসাবেক ফার্স্টলেডি,? রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাসহ নির্বিশেষে ট্রাম্প প্রশাসনের শিশু বিচ্ছিন্নকরণ পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। চাপের মুখে বিচ্ছিন্নকরণ ঠেকাতে ‘পরিবারকে একত্রিত রাখা’র এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। ওই ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই গত জুনে আটক অভিবাসী শিশুদের দেখতে টেক্সাসে যান মেলানিয়া। অ্যান্ড্রুস বিমান ঘাঁটি থেকে ম্যাকালেনে বর্ডার ফ্যাসিলিটিতে রওনা দেন তিনি। বিমানে ওঠার সময় তার গায়ে দেখা যায় একটি জ্যাকেট।

আর তার পেছনে বড় বড় অক্ষরে লেখাÑ ‘আই রিয়্যালি ডোন্ট কেয়ার, ডু ইউ?’ (সত্যিই আমি পরোয়া করি না। তোমরা করো কী?)। আর সে ছবিটি প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তবে মেলানিয়া যখন টেক্সাসে পৌঁছান তখন তার গায়ে জ্যাকেটটি ছিল না। টেক্সাস থেকে অ্যান্ড্রুস বিমান ঘাঁটিতে ফেরার পর আবারও তার গায়ে দেখা যায় সেই জ্যাকেট।

মেলানিয়ার মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশামের কাছে সে সময় ওই জ্যাকেটের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেছিলেন ‘ওইটা একটা জ্যাকেট মাত্র। সেখানে কোনো গুপ্তবার্তা ছিল না।’ তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে সময় দাবি করেছিলেন, স্ত্রী মেলানিয়া ইচ্ছে করেই ওই বার্তাবাহী জ্যাকেটটি পরেছিলেন। ফেক নিউজ মিডিয়াগুলোকে সাবধান করতেই ওই বার্তা দিচ্ছিলেন তিনি। টুইটারে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘আমি সত্যিই পরোয়া করি না, তোমরা করো কি?’ মেলানিয়ার জ্যাকেটের পেছনে লেখা এ বার্তাটি ফেক নিউজ মিডিয়াকে ইঙ্গিত করেই দেওয়া হয়েছে। মেলানিয়া বুঝে গেছেন তারা (ফেক নিউজ মিডিয়া) কতটা অসৎ এবং সে সত্যিকার অর্থেই আর তাদের পরোয়া করে না!’

এবার মেলানিয়াও ট্রাম্পের পক্ষেই অবস্থান নিলেন। দাবি করলেন, ওই জ্যাকেটের মাধ্যমে বার্তা দিতে চেয়েছেন। শনিবার (১৩ অক্টোবর) এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেলানিয়া দাবি করেন, ‘হ্যাঁ, জ্যাকেটটির মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই আমি জ্যাকেটটি শিশুদের জন্য পড়িনি। বিমানে ওঠার সময় ও বিমান থেকে নামার সময় আমার গায়ে জ্যাকেটটি ছিল। আমার সমালোচনাকারী মানুষ ও বামপন্থি সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য এ বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের দেখাতে চেয়েছি, আমি তাদের পরোয়া করি না। আপনারা যা খুশি সমালোচনা করতে পারেন, বলতে পারেন। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আমাকে যে কাজটি ঠিক মনে করব তা করা থেকে বিচ্যুত করা যাবে না।’ মেলানিয়া আরো বলেন, ‘আমি প্রায়ই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, যদি আমি ওই জ্যাকেট না পরতাম, তবে কি আমি সংবাদমাধ্যমে এত বেশি আলোচনায় আসতাম? আশা করব, আমি কী পোশাক পরছি তার চেয়ে আমি কী কাজ করছি তার ওপর তারা (সংবাদমাধ্যম) গুরুত্ব দেবে।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মেলানিয়া ট্রাম্পের দৃঢ় অবস্থান তার সমর্থকদের আনন্দিত করলেও সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়নি। এতদিন পরে ওই বার্তা নিয়ে মুখ খোলায় মেলানিয়ার সমালোচনা করছেন তারা। ডোনাল্ড ট্রাম্প যতদিন হোয়াইট হাউসে থাকবে ততদিন মেলানিয়া ধারাবাহিকভাবে গুঞ্জনের উৎস হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে আবার আগের চেয়ে বেশি করে মেলানিয়ার পোশাকে গুপ্ত-অগুপ্ত বার্তা খুঁজতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close