আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পরিবারের সংগ্রামে যেভাবে বাঁচল নোরার জীবন
স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড মাথায় নিয়ে বন্দি আছেন ১৯ বছর বয়সী সুদানি তরুণী নোরা হোসেইন। স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড মাথায় নিয়ে জেলবন্দি আছেন নোরা হোসেইন। ১৯ বছর বয়সী সুদানি এই তরুণীকে প্রাণে-বাঁচাতে কোন একটা অলৌকিক কিছুর প্রত্যাশা করছেন তার বাবা-মা। অবশ্য, লোকে এই কথা ছড়িয়ে ছিল যে, নোরাকে তার বাবা-মা পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নোরাকে বাঁচাতে হন্যে হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সবাই। এক বছর ধরে নোরা জেলে। বছরখানেক পর এই প্রথম মায়ের সাক্ষাৎ পেয়ে অঝর ধারায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সে।
তখনই নোরার মা জয়নব আহমেদ বিবিসির প্রতিবেদক মোহাম্মদ ওসমানকে জানাচ্ছিলেন যে, স্বামীর হাতে প্রথমবার ধর্ষণের শিকার হবার পর নোরা আসলে আত্মহত্যাই করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরের দিন নোরার স্বামী যখন আবার একই কাজ করতে যায় তখন আত্মরক্ষার্থে ছুরি নিয়ে প্রতিরোধ করে তার মেয়ে। আর সেসময়ই ঘটনাচক্রে ছুরিকাহত হয়ে মারা যায় নোরার স্বামী আবদুল রহমান মোহাম্মদ হাম্মাদ, বলছিলেন জয়নব আহমেদ। নোরাকে মৃত্যুদ-ের হাত থেকে বাঁচাতে শুরু হয় জাস্টিস ফর নোরা নামে একটি অনলাইন প্রচারণা।
বিশ্বব্যাপী তুমুল আলোড়ন তোলা এই ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়েছিলেন সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেল ও অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন। হাম্মাদ যখন নোরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন নোরার বয়স ছিল মোটে ১৬। এই বিয়েতে নোরার খুব যে অমত ছিল তা নয়। তবে তখনই বিয়েটা না করে নোরা কিছুদিন দেরি করতে চাইছিল। কারণ সে পড়ালেখা করতে চেয়েছিল। আইন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে শিক্ষক হতে চেয়েছিল সে। কিন্তু সামাজিক অনিরাপত্তার ভয়ে নোরার বাবা তাকে জোর করে এই বিয়ে দেন।
নোরার বাবা বলতেন, এই বয়সেই আশপাশের বহু মেয়ে অনাকাক্সিক্ষতভাবে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে। তাই, এসব কিছু ঘটার আগেই বিয়ে হওয়া ভালো। নোরাকে যখন তার অমতে বিয়ে দেয়া হচ্ছিলো তখন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা অসম্পূর্ণ রেখেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে তার এক আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নেয়। সেই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নোরাকে এই কথা বলে ফেরত আনা হয়েছিল যে, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার বাকি কাজ আর সম্পন্ন করা হবে না। কিন্তু নোরা ফিরে এলে বিয়ের কাজ ঠিকই সম্পন্ন করা হয়। তবে তখনই তাকে স্বামীর সঙ্গে থাকতে যেতে হয়নি। বিয়ের পর দুই বছর ধরে নোরা তার বাবা-মায়ের সাথেই বাস করছিলো। তবে একটা পর্যায়ে পরিবারের অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠরা এই নিয়ে খুব নাখোশ হন। এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জবরদস্তিমূলক নোরাকে তার স্বামীর সাথে আলাদা বাসায় যেতে বাধ্য করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে বলেছেন আলাদা বাসায় গিয়েও নোরা সেই ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী ফ্ল্যাটে তালা মেরে রাখতো বলে সে পালাতে পারেনি। এভাবেই সপ্তাহখানেক ধরে আলাদা বাসায় থাকলেও নোরা শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত ছিল। এমনটা সিএনএনের পক্ষ থেকেও জানা যায়। নানাভাবে সে তার স্বামীকে যৌন সম্পর্ক করা থেকে দূরে রেখেছে।
"