এক রাতের জন্য সহবাস কিংবা পরকীয়া সব ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। কিছু মানুষ একে মনোগামী বা একগামিতার ব্যর্থতা মনে করেন। আসলেই কি তাই? মানুষের বহুগামিতা কিংবা যৌন জীবনে অসততা নিয়ে বিজ্ঞান কী বলে? সেটা ছিল পড়ন্ত বিকাল, মদের নেশাটাও বাড়ছিল, মোটের ওপর সঙ্গিনীও ছিল আকর্ষণীয়। ফলে হাসিঠাট্টা একপর্যায়ে চুমুতে রূপ নেয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে বিছানায়। ম্যাক্স মাঝে মাঝেই এভাবে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। আর এটা কোনো সমস্যা হতো না, যদি না তিনি বিবাহিত হতেন। ম্যাক্স মনে করেন, তার এই যৌন আকাক্সক্ষা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এমনটা করা ঠিক নয়।

যুগল এবং সেক্স থেরাপিস্ট গের্টরুড ভোল্ফ অবশ্য এ ব্যাপারে তার অবস্থান এক কথায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই একগামী নয়। ভোল্ফের এক তৃতীয়াংশ ক্লায়েন্টই তার কাছে আসেন প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে। একটি দম্পতি বা যুগলের যেকোনো একজন অন্য জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, এমন অভিযোগই বেশি। আর অনেক যুগলের কাছেই, যৌন জীবনে সৎ থাকা মানে একগামিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমি প্রায়ই এমন মানুষের মুখোমুখি হই, যারা বলেন যে তারা কোনো দিনই প্রতারণা করবেন না এবং তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী যদি প্রতারণা করেন তাহলে তাকে ক্ষমা করবেন না।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় তাদের অনেকে আবার আমার সামনে এসে বসেন, কেননা তারা আসলে যৌন জীবনে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অনেক মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, একগামিতার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত। একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান তারা। আর কারো কারো মতে, একগামিতা আসলে সেকেলে ব্যাপার, যা শিগগিরই সমাজ থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

ভোল্ফ মনে করেন, একগামিতা হচ্ছে পুরুষের আবিষ্কৃত এক ধারণা, যাকে সাংস্কৃতিক অর্জন বলা যেতে পারে। আর এটা এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও।

ভোল্ফ তার বই ‘কন্সট্রাকশন অব অ্যাডাল্ট’-এ মানুষের যৌন আকাক্সক্ষার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেখানে তিনি দুই ধরনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। একটি ধরন হচ্ছে, যেটি পুরোপুরি শারীরিক চাহিদা থেকে সৃষ্ট। এখানে ঘনিষ্ঠতার কোনো ব্যাপার নেই বরং পুরোটাই শারীরিক চাহিদা। এই সম্পর্ক সাময়িক। ম্যাক্স এটা জানেন। জানেন রেবেকাও। বর্তমানে ৩০ বছর বয়সি এই নারী বয়স ২০ পেরোনোর পর নানাভাবে যৌনতার স্বাদ নিয়েছেন। কখনো সুইনগার ক্লাব মানে তাৎক্ষণিক সঙ্গী বদলের ক্লাবে গিয়েছেন, কখনো এমন সব স্থানে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, যা স্বাভাবিকভাবে ভাবা যায় না। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল যতটা সম্ভব আনন্দ, উত্তেজনা উপভোগ করা।আর দ্বিতীয় ধরনের সম্পর্ক হচ্ছে, যেখানে যৌনতার মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া ঘনিষ্ঠতা, যা মানসিকও হতে পারে। ভোল্ফের ভাষায় যাকে বলে, সংস্কৃতির আদলে যৌনতা। তার মতে, এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একগামিতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে, কেননা দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ককে মজবুত করে তোলেন। ম্যাক্স সব সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। তিনি স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে একবারের বেশি সহবাস করেন না, কেননা তিনি সেসব সাময়িক সম্পর্কে কোনো ধরনের ঘনিষ্ঠতা চান না।

ম্যাক্সের শরীর সম্ভবত কোনোভাবে বীর্যপাতের সময় অক্সিটকিন হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ রাখতে পারে। এই হরমোন মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। একজন মা যখন তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তখন তার শরীরে এই হরমোন ভাসতে থাকে। ফলে মা এবং সন্তানের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত গাঢ় হয়। এই হরমোনের উপস্থিতির কারণে সাময়িক যৌন সম্পর্কও ভিন্ন রূপ নিতে পারে। অর্থাৎ কোনো একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী অপরজনের প্রতি। ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতে শুরু করতে পারেন। অনেক যুগল এই ঝুঁকি এড়াতে একগামী হন, অর্থাৎ সম্পর্কের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান না।

রেবেকাও নিজের অতীতকে পেছনে ফেলে এখন একগামী সম্পর্কে রয়েছেন। তবে তিনি তার ছেলেবন্ধুকে মনে করেন একজন রক্ষণশীল মানুষ, যে যৌন জীবনটা রেবেকার মতো উপভোগ করতে পারে না বা চায় না।

রেবেকা বলেন, অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক করতে না পারা নিয়ে আমার এখন কোনো আক্ষেপ নেই। তবে আমি অতীতের সেই উত্তেজনা এখনো মাঝে মাঝে মিস করি।

রেবেকার আশা, তার ছেলেবন্ধু একসময় আরো উদার হবেন এবং যৌন মিলনের ব্যাপারটি শুধু বেডরুমেই সীমাবদ্ধ রাখবেন না। রেবেকার জন্য সেটা অনেক উত্তেজনাকর ব্যাপার হবে বটে কিন্তু যদি তার ছেলেবন্ধু সেটা কখনো না করেন, তাহলে কী হবে?

গের্টরুড ভোল্ফের কাছে আরো এক ধরনের ক্লায়েন্ট আসেন, যাদের যৌন চাহিদা তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী পূরণ করেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুইজনের চাহিদা ভিন্ন কিংবা একজনের চাহিদা অন্যজনের পছন্দ নয়। সেসব যুগলের ক্ষেত্রে সম্পর্কটা একসময় এমন এক পর্যায়ে চলে যায় যে, তাদের কেউ কেউ নিজের চাহিদা পূরণে অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং প্রতারণা তাদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় না।

ভোল্ফ মনে করেন, যৌনতা নিয়ে এমন কোনো একক সমাধান নেই, যা সব যুগলের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। কিছু যুগল এই সমস্যার সমাধানে তাদের সম্পর্কটা উন্মুক্ত করে দেন, অর্থাৎ যৌন জীবনে একগামী থাকার ব্যাপারটি বাদ দিয়ে দেন। ক্যাথরিনা এবং তার ছেলেবন্ধু ঠিক এই কাজটি করেছেন।

এই যুগল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, নিজেদের সম্পর্কের বাইরে সাময়িক যৌন সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে তারা একে অপরকে বাধা দেবেন না। ক্যাথরিন অবশ্য জানেন, এভাবে যে পরীক্ষা তারা করেন, সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটা কোনো মজার ব্যাপার নয়। তিনি বলেন, আমার কাছে এই উন্মুক্ত সম্পর্কের অর্থ এই নয় যে, আমি যা খুশি তাই করতে পারব।

যেহেতু তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আর কোনো সীমান্ত নেই তাই তাকে নিজের কৃতকর্মের জন্য দায় নিতে হয়। ফলে তিনি এমন কিছু করতে পারেন না যা তার নিজের এবং তাদের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়াও একটি সম্পর্ককে উন্মুক্ত করে দেয়। তবে সেক্ষেত্রে যে এভাবে প্রতারণা করছেন, তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে চান না।

ভোল্ফ বলেন, পরকীয়া বা উন্মুক্ত সম্পর্ক যাই হোক না কেন, যুগলের মধ্যে সেটা সংকট তৈরি করতে পারে। আবার এই সংকটের কারণে একটি সম্পর্ক বৃদ্ধিও পেতে পারে।

একগামিতাই একমাত্র ‘অর্থবহ সম্পর্কের ধারণা’ নয় : এই সেক্স থেরাপিস্টের কথা হচ্ছে, একগামিতাই যেমন সম্পর্কের একমাত্র অর্থবহ ধারণা নয়, আবার একগামিতার ধারণা ব্যর্থও হয়নি। ফলে একটি যুগল কোন ধরনের সম্পর্ক গড়বেন, সেটা দিনের শেষে তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে, অন্য কেউ সেটা ঠিক করে দিতে পারবে না।

"