আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৬ জুলাই, ২০১৮

বায়ুদূষণ রোধে দিল্লিবাসী

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায় অতিক্রম করায় এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সেখনকার বাসিন্দারা দূষণবিরোধী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দিল্লিতে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বায়ুদূষণের যে মাত্রাকে গ্রহণযোগ্য নিরাপদ সীমা বলে মনে করে, গত ডিসেম্বরে দিল্লির অনেক এলাকায় দূষণের মাত্রা ছিল তার ৩০ গুণ বেশি। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে শহরকে বাঁচাতে দূষণবিরোধী বিক্ষোভ, র‌্যালি, প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন দিল্লির বাসিন্দারা। ‘দিল্লি ট্রি’জ এসওএস নামের তেমনই একটি সংস্থার একজন সক্রিয় কর্মী জুহি সাকলানি বলছিলেন, শুধু দূষণ রোধে কাজ করলেই হবে না দিল্লিকে বাঁচাতে নগর পরিকল্পনাবিদদের নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সাকলানি বলেন, আমরা খুবই জটিল একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। বায়ুদূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে গাছও কাটা হচ্ছে দিল্লিতে। তিনি বলেন, প্রতি বছর দিল্লির দূষণের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ও সাধারণ নাগরিকরা এই দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে শহরের অবস্থা আরো খারাপ হবে। তবে বর্তমানে অনেকেই এই দূষণের বিষয়ে সোচ্চার বলে আশা প্রকাশ করেন সাকলানি।

দিল্লির রাস্তায় প্রায়ই দূষণবিরোধী সমাবেশ, র?্যালির মতো কার্যক্রম প্রায়ই দেখা যায়। তেমনই একটি র?্যালির সামনের সারির লোকজন একটি প্ল্যাকার্ড ধরে রেখেছেন যেখানে লেখা আমরা যদি দূষণকে শেষ না করতে পারি তাহলে তা আমাদের ধ্বংস করে দেবে।

র?্যালিতে উপস্থিত সব বয়সী মানুষই বলছিলেন, দিল্লিতে বসবাস তাদের জন্য কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন নারী আক্ষেপ করছিলেন যে ১৯৭৩ সালে দিল্লি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ রাজধানী। আর এখন যে অবস্থা তা চলতে থাকলে পৃথিবীর রুক্ষতম রাজধানী হবে দিল্লি। মধ্য বয়সী একজন ভদ্রলোক বলেন, স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে না পারায় তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দিল্লির বাতাস এত খারাপ যে তার ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে না। ওই বিক্ষোভ সভাতেই একজন বক্তা মহিন্দ্র গোয়েল বলছিলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে কখনো কখনো পরিবেশগত দিকটি কম গুরুত্ব পায়।

তিনি বলেন, দিল্লির মতো একটি শহরে কর্মসংস্থান তৈরি করতে, জীবনযাত্রার মান ধরে রাখতে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেই হবে।

উন্নয়ন কার্যক্রমকে পরিবেশের ওপর অগ্রাধিকার দেয়ার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও গোয়েল মনে করেন, পরিবেশবাদীদের কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় দূষণের বিষয়ে পরিবেশবাদীদের বক্তব্যগুলো দূরদৃষ্টিহীন। এই সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে যৌক্তিক ও সময়োপযোগী আন্দোলন চালানো প্রয়োজন। গাছ কাটা বন্ধ করতে সম্প্রতি দিল্লি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। তবে ক্রমাগত দূষণের কারণে দিল্লির পর্যটন খাত যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লিতে বসবাসরত এক নারী বলছিলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় দিল্লিতে কাজ করতে আসা বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। দিল্লিতে বেড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও দূষণের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা বাতিল করেছেন অনেক বিদেশি পর্যটকও। তবে সম্প্রতি দিল্লি কর্তৃপক্ষকে আর কোনো গাছ না কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

তাই দিল্লিবাসীরা মনে করছেন, দেরিতে হলেও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist