রোববার রাত। মস্কোর রেড স্কোয়ারের কাছে উপচে পড়ছে ভিড়। বহু দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে ‘রাশিয়া’ ‘রাশিয়া’ চিৎকার। ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ৬৫ বছরের ভøাদিমিরোভিচ পুতিন বললেন, ‘এই ঐক্যটা বজায় রাখা খুব প্রয়োজন। আমাদের মহান মাতৃভূমির ভবিষ্যতের চিন্তা এখান থেকে শুরু হোক।’ আরো একবার রাশিয়া শাসনের ভার তারই হাতে তুলে দিয়েছে জনতা। রোববার রাতেই সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশন ঘোষণা করেছে, বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে (প্রায় ৭৭ শতাংশ) চতুর্থবারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পুতিন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট নেতা পাভেল গ্রুদিনিন পেয়েছেন ১৩ শতাংশ ভোট। আর জাতীয়তাবাদী নেতা ভøাদিমির ঝিরিনোভস্কির ঝুলিতে রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জেতা ক্রিমিয়ার ৯২ শতাংশ মানুষও পুতিনকেই ভোট দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, এবার পুতিন যত ভোট পেয়েছেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে কোনো নেতা এত ভোট আর কখনো পাননি।

রেকর্ড আরো আছে। পুতিনের আগে একমাত্র সোভিয়েত একনায়ক জোসেফ স্তালিনই একটানা এত বছর ক্ষমতায় ছিলেন। আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক ২৪ বছর ধরে ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সুযোগ পাননি। ভোটে অবশ্য ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা। যদিও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, কয়েকটি বুথে কিছু অসঙ্গতি থাকলেও মোটের ওপর গোটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে।

কাল প্রেসিডেন্টের কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ২০২৪-এর পরেও কি ভোটে দাঁড়াবেন? হেসে সরাসরি জবাব না দিয়ে পুতিন বলেন, ‘আপনাদের কী মনে হয়? ১০০ বছর পর্যন্ত আমি দায়িত্ব নিজের হাতে রেখে দেব?’

পুতিনের জয়ে উচ্ছ্বসিত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্টের এই জয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অন্য মাত্রা নেবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অভিনন্দন জানিয়েছেন পুতিনকে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন করেও সেইসঙ্গে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে রাশিয়াকে সতর্ক করেছেন। তাতে পুতিনের জবাব জানা যায়নি, তবে এই স্ক্রিপাল বিতর্ক যে সহজে তার পিছু ছাড়বে না, তা বোধহয় ভালো ভাবেই বুঝছেন পুতিন। ক্রিমিয়া নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ আর সিরিয়ায় আসাদ বাহিনীকে সমর্থনের সময় থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার দূরত্ব বাড়ছে। সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রাক্তন রুশ চর সের্গেই স্ক্রিপাল আর তার মেয়ের ওপর রাসায়নিক হামলার ঘটনায় সেই সম্পর্ক আরো তলানিতে ঠেকেছে। উল্টে বেড়েছে আমেরিকার চাপানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বোঝা। দেশে বাড়তে থাকা দারিদ্রের সঙ্গে এই নতুন নিষেধাজ্ঞা পুতিনের কপালে ভাঁজ ফেলবে কি? সেসব সামলে চতুর্থ ইনিংসে পুতিন কতটা সাবলীল ব্যাট করেন, সেটাই দেখার।

"