reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ মে, ২০১৯

টাইগারদের সেমিতে ওঠার সাত ফ্যাক্টর

দ্বাদশ বিশ্বকাপকে একবাক্যে ‘সবচেয়ে কঠিনতম আসর’ মানতে দ্বিধা নেই কারোর। মানবেন না-ই বা কেন? এবারের ফরম্যাটটা যে প্রতিযোগিতাটিকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলেছে। আগের আসরগুলোর মতো এবার আর একটা-দুটা অঘটন ঘটিয়ে পরের ধাপে পা রাখার সুযোগ নেই। এবারের আসরে রাউন্ড-রবিন পর্বেই প্রত্যেকটি দলকে খেলতে হবে ৯টি করে ম্যাচ। এরপর সরাসরি সেমি ফাইনাল। তবে শেষ চারের টিকিট পেতে হলে রাউন্ড রবিনে জিততে হবে অন্তত ছয়টি ম্যাচ। আর সেটা করতে হলে টুর্নামেন্ট-জুড়ে বাংলাদেশকে অতিমানবীয় পর্যায়ের ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।

প্রায় প্রত্যেক দলেই এক বা একাধিক খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা একাই ম্যাচ শেষ করে দিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের সেরকম কেউ নেই। তাই ১৬ কোটির বাংলাদেশির ‘সেমি স্বপ্ন’ পূরণ করতে হলে প্রতি ম্যাচেই কমপক্ষে চারজন খেলোয়াড়কে সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিতে হবে। টাইগাররা ছন্দময় ক্রিকেট প্রদর্শন আর দলগত নৈপুণ্যে বিশ্বাসী দল। সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে যদি ইংল্যান্ড, ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়াকে টেক্কা দিয়ে সুপার ফোরে জায়গা করে নিতে হয়, তাহলে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করতে হবে। সেসব ফ্যাক্টর পর্যালোচনা করে সাতটি মৌলিক ফ্যাক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলোর কোনো একটি অপূর্ণ থাকলেই টাইগারদের শেষ চারে ওঠার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যেতে পারে। ম্যাশবাহিনীর সেমিতে ওঠার সাত ফ্যাক্টর বা মন্ত্র নিয়ে লিখেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক সাহিদ রহমান অরিন

ফ্যাক্টর ১ * সৌম্যর ব্যাটিং গড় ৬০ বা এর আশপাশে রাখতে হবে

বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সৌম্য সরকারের ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি (৩৬ দশমিক ৬৭)। তার দুই সেঞ্চুরি আর দশ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসগুলোতে একটি বাদে সবকটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে লক্ষ্য তাড়ায় আরো বেশি বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন সৌম্য। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে কোনো টার্গেটকেই চ্যালেঞ্জিং মনে হয় না। ক’দিন আগে তিন জাতির সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ যে ২২ দশমিক ৫ ওভারেই ২১০ রান চেস করে ফেললো, তার প্রধান কারণ সৌম্যের খুনে মূর্তি। এই ড্যাশিং ওপেনার যদি তার ব্যাটিং ফর্ম ধরে রাখতে পারেন এবং গড় ৬০ বা এর আশপাশে রাখতে পারেন, তাহলে সেই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রানের গতি সচল রাখতে পারবেন।

ফ্যাক্টর ২ * সাকিবের ইকোনমি রেট ৫-এর নিচে রাখতে হবে

বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপ খুব একটা শক্তিশালী নয়। একেবারে বেসিক বজায় রেখে বোলিং করতে পারাটাই যা ভরসা। তবে বোলারদের মাঝে সাকিব আল হাসান এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম। তিনি অসাধারণ কোনো টার্নার নন, ভয়ঙ্কর কোনো ডিলেভারিও নেই তার স্টকে। কিন্তু তিনি জানেন, বলটা কোথায় পিচড করালে ব্যাটসম্যানদের খেলতে অস্বস্তি হয়। সেটা দিয়েই তিনি একযুগ ধরে টপাটপ উইকেট তুলে নিচ্ছেন। তিনি যদি বিশ্বকাপজুড়ে ইকোনমি রেট ৫-এর নিচে রাখতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ভাবে উইকেটও মিলবে। অন্যদিকে তার এই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের প্রভাবে অপরপ্রান্তে সতীর্থ বোলারের উইকেট প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ব্যাটিংয়ে যেমন জুটি বেঁধে খেলা হয়, বোলিংয়েও তেমন জুটি কাজ করে। স্পিন ডিপার্টমেন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সেই জুটি তৈরির দায়িত্বভার নিতে হবে সাকিবকেই।

ফ্যাক্টর ৩ * সব মিলিয়ে মুশফিককে ৭৫০ বল খেলতে হবে

মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের সেই ব্যাটসম্যান, যিনি ক্রিজে থাকলে মনে হয় বোলাররা তাকে আউট করতে পারবে না। শারীরিক গড়নে খর্ব হলেও তার মতো ধারাবাহিক স্লগিং বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানকে করতে দেখা যায় না। তিনি হয়তো অবলীলায় ছক্কা হাঁকাতে পারেন না, কিন্তু অবিরাম ‘চিকি শট’ খেলে রান বাড়িয়ে নিতে পারেন। বিশ্বকাপে মুশফিক যদি নার্ভাস ব্রেক ডাউন না করেন, তাহলে বড় স্কোর গড়া কিংবা লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ খুব একটা সমস্যার সম্মুখীন হবে না। তিনি যদি টিকে যান, তাহলে সাব্বির কিংবা মোসাদ্দেক সহজেই ম্যাচটা ফিনিশ করে আসতে পারবেন।

ফ্যাক্টর ৪ * রুবেলকে অন্তত ৫০ ওভার বোলিং করার সুযোগ দিতে হবে

গেল বিশ্বকাপে ইংলিশ বধের কথা স্মরণ করুন। ওয়িন মরগানকে আচমকা তুলে নেওয়ার পর নিজের শেষ ওভারে স্টুয়ার্ট ব্রড ও জিমি অ্যান্ডারসনকে যেভাবে বোল্ড করেছিলেন, তাতে নিদ্বির্¦ধায় বলা যায় চাপের মুখে বাংলাদেশের হয়ে অমন বোলিং আর কেউ করতে পারবেন না। ধরুন, ওই পরিস্থিতিতে যদি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বোলিং করতেন, তাহলে ব্রড তার সেøায়ার কিংবা লো ফুল টসে ছক্কা হাঁকানোর দুঃসাহস দেখাতেন। আগে বোলিং করলে সাইফউদ্দিনের বৈচিত্র্য দিয়ে হয়তো কিছুটা রান কমানো সম্ভব; কিন্তু ডিফেন্ডের ক্ষেত্রে যেখানে উইকেট টেকিংই একমাত্র অপশন, সেখানে রুবেলের কোনো বিকল্প নেই। ২০১৮ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের শোয়েব মালিক উইকেটে এ করকম থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। এমন সময় আচমকা তাকে মাশরাফির ক্যাচ বানানো কিংবা ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে মাত্র ২২২ ডিফেন্ড করতে গিয়েও ম্যাচটা যে শেষ বল অবধি গড়িয়েছিল, তার প্রধান কারণ সেট ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাকে ম্যাচের ধারার বিপরীতে আউট করে দেওয়া। এগুলোই রুবেল হোসেনের ইমপ্যাক্ট। ফলে খরুচে বোলিংয়ের অজুহাতে তাকে বসিয়ে রাখা পরাজয়কে আমন্ত্রণ জানানোর শামিল।

ফ্যাক্টর ৫ * তামিমকে কমপক্ষে ৩৫০ রান করতে হবে

এটাকে সাপোর্টিভ ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ দেশসেরা ওপেনারের কাছ থেকে এটা মোটেও উচ্চাভিলাষী চাহিদা নয়। ৯ ম্যাচে ৩৯ গড় রাখতে পারলেই ৩৫০-এর কোটা পেরোনো সম্ভব। আর তামিমের এই সংগ্রহটাই দলের বড় রান সংগ্রহের ভিত্তি গড়ে দেবে।

ফ্যাক্টর ৬ * মাশরাফিকে কমপক্ষে ১২ উইকেট নিতে হবে

অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বল হাতেও জ্বলে উঠতে হবে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। প্রথম স্পেলের ৫ বা ৬ ওভারে মাশরাফি যদি অন্তত একটি করে উইকেট তুলে নিতে পারেন, তাহলে সেটা ম্যাচের মোমেন্টাম বাংলাদেশের অনুকূলে আনতে সহায়তা করবে। পরের চার ওভারে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যাশ যদি আরো কিছু উইকেট শিকার করতে পারেন, তাহলে সেটাই টাইগারদের জয়ে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ফ্যাক্টর ৭ * মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক রেট ১০২+ হতে হবে এবং কমপক্ষে ২৫ ওভার বোলিং করতে হবে

সম্প্রতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তেমন কোনো কার্যকরী ইনিংস উপহার দিতে পারেননি। তবে বিশ্বকাপে তিনি যদি সøগ ওভারে তার দায়িত্বটা পালন করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ‘পার্টনারশিপ ব্রেকার’ হিসেবে তার বোলিংটাও বেশ কার্যকরী। কাঁধের ইনজুরিতে নিউজিল্যান্ড সফরে মাত্র ১ ওভার বোলিং করেছেন। এরপর থেকে দীর্ঘদিন আর হাত ঘোরানোর সাহস দেখাননি। তবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে ফের বোলিংয়ে ফিরেছেন। মূল মঞ্চেও তার ঘূর্ণি দেশের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে বলেই বিশ্বাস সবার।

এই সাতটি মৌলিক ফ্যাক্টেরর বাইরেও কিছু টোটকা রয়েছে, যেগুলোকে ‘অনারেবল মেনশন’ বলা যেতে পারে। যেমন- (১) মুস্তাফিজুর রহমানের ইকোনমি রেট ৬-এর নিচে রাখা এবং অন্তত ১০টি উইকেট শিকার করা। (২) মোহাম্মদ মিঠুন আলীকে বসিয়ে লিটন দাশকে প্রথম তিন ম্যাচে একাদশে রাখা। যদি তিনি ৪০+ গড়ে রান তুলতে পারেন, তাহলে পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও সুযোগ দেওয়া। আর সেটা করতে ব্যর্থ হলে একাদশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া। (৩) ফিনিশিংয়ের ক্ষেত্রে সাব্বির রহমান কিংবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সহায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হলেই চলবে না, বরং সিনিয়রের ওপর থেকে চাপ কমানোর কাজটাও করতে হবে। সেক্ষেত্রে সøগ ওভারে ‘অতি আক্রমণাত্মক’-এর ভূমিকা পালন করতে হবে সাব্বির-সৈকতকেই। (৪) যেহেতু সাইফউদ্দিনের বলে গতি নেই, তাই তাকে প্রথম পাওয়ার প্লে কিংবা ডেথ ওভারে বোলিংয়ে আনা মানেই ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। তাই তার হাতে মিডল ওভারে বল তুলে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close