ক্রীড়া ডেস্ক

  ৩০ মে, ২০১৯

একসঙ্গে পঞ্চপা-বের শেষ বিশ্বকাপ

নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপে এসে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। পঞ্চপা-বের একসঙ্গে শেষ বিশ্বকাপ রাঙাতে অভিজ্ঞতার ভা-ার আর তারুণ্যের স্বতঃস্ফূর্ততার মিশেলে প্রস্তুত টিম বাংলাদেশ। গেল কয়েক বছরে বদলে যাওয়া টাইগারদের যে এখন সমীহ করে সব প্রতিপক্ষ, তার পেছনের কারণ ওই পঞ্চপা-বই।

১৯৯৯-এ পাকিস্তান বধ ছিল বিশ্বকাপের বড় অঘটন। ২০০৭-এ ভারতকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেওয়ার প্রথম ধাপ সম্পন্নকেও ক্রিকেট বোদ্ধারা অঘটন হিসেবেই দেখেন।এরপর কেটে গেছে এক দশক। টাইগাররা এ সময়ে হারিয়েছে সব দলকেই। পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কাদের বিপক্ষে জয় আসছে নিয়মিতই। এখন টাইগারদের যে কেনো জয়কে ‘অঘটন’ বলাটা যে ভুল, বুঝেছে ক্রিকেট বিশ্ব। আর এই জয়গুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতেই ব্যাটে-বলে অবদান রাখছেন ‘ফ্যান্টাসটিক ফাইভ।’ নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ অভিযানে নামার আগে ১৬ কোটি বাংলাদেশির আস্থার নাম মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। এই পাঁচ বীরের প্রথম জনের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ আসরে। তবে ওই আসরে জয়হীন বাংলাদেশ। অবশ্য সেই হতাশা দূর হয়েছে পরের আসরে। ২০০৭-এ গ্রুপ পর্ব থেকে ভারতের বিদায় ঘণ্টা বাজানো ছাড়াও বারমুডা জয় ও সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শিরোনামে এসেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেখানেও অবদান কম নয় অভিষিক্ত সাকিব-তামিম-মুশফিকদের। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপেও জয় তিনটি। এই আসর দিয়ে পঞ্চপা-বের শেষ জন মাহমুদউল্লাহর বিশ্বকাপ অভিষেক হলেও চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় খেলা হয়নি ম্যাশের। ওই আসরে ‘তিন ল্যান্ড’- ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকে হারালেও রান রেটে পিছিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা হয়নি টাইগারদের। অবশেষে ২০১৫তে গিয়ে সেই আশা পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। দেশকে প্রথমবার ক্রিকেট মহাযজ্ঞের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ‘ফ্যান্টাসটিক ফাইভ’। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ম্যাশ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক আসরে দুই শতক হাঁকান মাহমুদউল্লাহ। তাতে আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ডের পর ধরাশায়ী ইংল্যান্ড। অবশ্য কোয়ার্টারে ভারতের কাছে পরাজয়ে ছিল ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

আগের পাঁচ বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৩২ ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। জয় ১১টিতে। ২০১৫তে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২২ রান টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ব্যাটে-বলে বিশ্বকাপে টাইগারদের সেরা আরেক পা-ব সাকিব। তিন আসর মিলিয়ে ৫৪০ রান সাকিবের, উইকেট ২৩টি। যদিও কখনোই ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে ওঠেনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের শুরু ওই বিশ্বকাপের পর থেকেই। ১৩টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এ সময়ে জয় ৮টিতে। মাল্টি ন্যাশন টুর্নামেন্টে চারবারের ফাইনালে ট্রফি ধরা দিয়েছে একটি। এসবের বাইরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল বাংলাদেশকে নিয়ে বাকিদের ভাবনাটা বদলে দিয়েছে।

এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডকে টাইগারদের এ যাবৎকালের সেরা বলছেন বিশ্লেষকরা। ব্যাটিং নির্ভরতায় তামিম-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। সৌম্য-মিঠুনদের ফর্ম দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্কোয়াডে অলরাউন্ড অপশন আছে। সাকিব-মিরাজ-সাইফুদ্দিন-মোসাদ্দেক কম্বিনেশনে আনবে বৈচিত্র্য। অধিনায়ক মাশরাফির পেইস ইউনিট নিয়ে যা একটু দুশ্চিন্তা। মুস্তাফিজ-রুবেল-রাহীদের পেইস ইংলিশ কন্ডিশনে কতটা কার্যকরী হবেÑ সেটা সময়ই বলে দেবে।

বিশ্বকাপে টাইগারদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র পঞ্চপান্ডবের অভিজ্ঞতা। তিনটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা মাশরাফি-সাকিব-তামিম আর মুশফিকের। দুটি খেলেছেন মাহমুুদউল্লাহ।

একসঙ্গে বহু দিন ধরে দেশকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। টাইগার ক্রিকেটের সব বীরত্বগাথা তাদের হাত ধরেই এসেছে। এই পাঁচজনের একসঙ্গে শেষ বিশ্বকাপে আগের সব অর্জন ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেটপাগল ১৬ কোটি বাংলাদেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close