ডা. গোবিন্দচন্দ্র দাস
পোকামাকড়ের কামড় থেকে অ্যালার্জি
প্রতিবছর অসংখ্য মানুষকে দংশন করে পোকামাকড়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হুলের কারণে ব্যথা এবং অস্বস্তি থাকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত এবং আপনা থেকেই তা যায়। পোকামাকড় দংশনের ফলে মূল উপসর্গ হিসেবে দেখা যায় লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া এবং চুলকানি। তবে কিছু মানুষ আছে, পতঙ্গের কামড়ে যাদের অ্যালার্জি হয়। অর্থাৎ তাদের শরীরের প্রতিরোধক শক্তিগুলো পতঙ্গের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। পতঙ্গ দংশনের ফলে এ ধরনের ব্যক্তির শরীরে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যার নাম ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই (আইজিই)। এ অ্যান্টিবডি পতঙ্গের বিষের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। এরপর যদি ওই ব্যক্তিকে একই পতঙ্গ বা একই প্রজাতির পতঙ্গ আবার দংশন করে, তখন এ নতুন বিষ আগের অ্যান্টিবডির সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে হিস্টামিন ও অন্যান্য কেমিক্যালের নিঃসরণ ঘটায়, ফলে অ্যালার্জি দেখা দেয়।
চিকিৎসা : যদি মৌমাছি কামড়ায়, ত্বকে যদি হুল ফুটে থাকে, তাহলে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে হুলটি তুলে ফেলুন। কারণ হুলের সঙ্গে বিষের থলি সংযুক্ত থাকে। হুল তুলে ফেললে বাড়তি বিষ শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। নখ দিয়ে চুলকালে হুল ও বিষথলি অপসারিত হয়ে যায়। মালিশ করলে বা ডলাডলি করলে বরং বিষথলি থেকে বেশি পরিমাণে বিষ ত্বকে মিশে যাওয়ার সুযোগ পায়। ভিমরুল বা বোলতার কামড়ে সাধারণত হুল ত্বকে সংযুক্ত থাকে না। শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। খুব দ্রুত শরীর থেকে পতঙ্গগুলো ঝেড়ে ফেলুন এবং তাৎক্ষণিক সেই স্থান ত্যাগ করুন।
যদি আগুনে পিঁপড়া কামড়ায় তাহলে আরো কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীর থেকে সাবধানে সেগুলো ঝেড়ে ফেলুন। সেই স্থান ত্যাগ করুন। এ পতঙ্গের হুল থেকে সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরীরে ফোস্কা তৈরি হয়। ভেতরের রস ক্রমে ঘোলাটে হয়ে পুঁজের আকার ধারণ করে। তবে ভয়ের কিছু নেই। আগুনে পিঁপড়ার কামড় ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে। অর্থাৎ পুঁজের মতো মনে হলেও আসলে মৃত কোষ। সেভাবেই রেখে দিন। সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফোস্কা শুকিয়ে যাবে। যদি আগেই ফোস্কা গলে যায়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ আছে কি না। ডায়াবেটিস, ভেরিকেন ডেইন এবং ক্রেবাইটিস রোগীদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। শতকরা ৫০ জন রোগী আগুনে পিঁপড়ার দংশনের ফলে বেশ কয়েক দিন দংশনের জায়গায় চুলকানি এবং ব্যথা অনুভব করে থাকেন। পতঙ্গ দংশনের পর নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে উপসর্গের তীব্রতা কমানো সম্ভব হতে পারেÑ
পতঙ্গ যে হাতে-পায়ে দংশন করেছে, সেটাকে উঁচু করে রাখুন। বরফ বা ঠান্ডা লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমবে।
ফোস্কা গলাবেন না। সাবান-পানি দিয়ে সাবধানে ফোস্কার চারপাশ পরিষ্কার করুন। এতে পরবর্তী সময়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়।
চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খাবেন। স্টেরয়েড মলম ব্যবহার করতে পারেন দংশনের জায়গায়। যদি ফোলা বাড়তেই থাকে, কিংবা দংশিত স্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পোকামাকড় দংশনের ফলে শরীরে যদি অ্যালার্জির মাত্রা বেড়ে যায়, তবে অবশ্যই একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, অ্যালার্জি বিভাগ
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার
"