ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

সাইনুসাইটিসে নাক বন্ধ

আপনার কি এমন সর্দি হয়েছে, যা সারতে চাইছে না? এর সঙ্গে কি নাক বন্ধ থাকা, মাথা ও চোখ ভারি বোধ হওয়া, ঘন ঘন শ্লেষ্মা তৈরি হওয়া, কাশি, নিঃশ্বাসে কষ্ট, দাঁতে ব্যথা ও সবসময় ক্লান্তিবোধের মতো উপসর্গ রয়েছে। এগুলোর কোনোটি যদি থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে, আপনার সাইনুসাইটিস রয়েছে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৪ জনই সাইনুসাইটিসে আক্রান্ত। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশুর ক্ষেত্রে সংখ্যাটি কম হলেও রোগ নির্ণয় করা বেশ দুঃসাধ্য।

মাথার খুলির বায়ুপূর্ণ প্রকোষ্ঠগুলোকে সাইনাস বলা হয়। যেকোনো কারণে সাইনাসগুলোতে প্রদাহ হলে ও ফুলে গেলে তাকে সাইনুসাইটিস বলা হয়। এটি হতে পারে তামাকের ধোঁয়া, ভাইরাসজনিত সর্দির পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অ্যালার্জি এবং আরো নানা কারণে। ইনফেকশনের প্রধান কারণ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। তবে তুলনামূলক কম হলেও ছত্রাক দ্বারা ইনফেকশন হয়। সাইনুসাইটিসের সঙ্গে প্রায় সবক্ষেত্রেই নাক বন্ধ ও প্রদাহ যুক্ত থাকে বলে এ রোগকে রাইনোসাইনুসাইটিস বলাই সঙ্গত। (রাইনো শব্দের অর্থ নাক)।

সর্দি বা ভাইরাস এ রোগের প্রধান কারণ। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। ব্যাকটেরিয়াজনিত রাইনোসাইনুসাইটিস ভাইরাসের চেয়ে সাত বা ১০ দিন বেশি স্থায়ী হয়, ব্যথা হয় বেশি এবং নাক থেকে পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে যায়।

ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনিতেই সেরে যায়। তখন চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে রোগীর কষ্ট কমানো এবং পরবর্তী ইনফেকশন প্রতিরোধ করা। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় সেই রোগীদের, যাদের উপসর্গগুলোর তীব্রতা খুব বেশি ও যাদের আরো জটিল ধরনের ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রাইনোসাইনুসাইটিসকে ক্রনিক বলা হয়, যখন তার স্থায়িত্ব চার সপ্তাহের বেশি হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়।

যেহেতু রাইনোসাইনুসাইটিস খুবই পরিচিত একটি অসুখ, তাই অধিকাংশ চিকিৎসকই এ রোগ শনাক্ত করতে ও চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। নাক, কান ও গলা রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে এ রোগের সুচিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। তারা অনেক সময় সার্জিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করেন। অবশ্য সার্জারির প্রয়োজন হয় খুবই কম। যদি নাকের গঠনে কোনো বিকৃতি দেখা দেয়, যার ফলে বারবার ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হয়। যেমন- নাকের পলিপ এবং নাজাল সেপ্টস ডেভিয়েশন (নাক একদিকে বাঁকা হয়ে যায়)।

অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞরা এ রোগীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম। তারা রোগের চিকিৎসায় একটি বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন, যার দ্বারা একদিকে যেমন রোগীর চিকিৎসাও করা যায়, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা যায়।

নিচের পরিস্থিতিগুলোতে আপনার পারিবারিক চিকিৎসক রাইনোসাইনুসাইটিসে চিকিৎসার জন্য অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন-

# আপনি যদি বছরে দুইবার মারাত্মক রাইনোসাইনুসাইটে আক্রান্ত হন বা আপনার রোগটি ক্রনিক হয়ে যায়।

# আপনার এমন কোনো সমস্যা আছে, যা থেকে রাইনোসাইনুসাইটিস হতে পারে। যেমন- অ্যালার্জিক রাইনাইটিস।

# আপনার হয়তো অন্য রোগ আছে, যেগুলো রাইনোসাইনুসাইটিসের কারণে বেড়ে যেতে পারে। যেমন- অ্যাজমা, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি।

# প্রচলিত চিকিৎসায় যখন আপনার রাইনোসাইনুসাইটিসের উপশম হচ্ছে না, তখন আপনাকে শিরাপলো ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে।

# আপনার যদি নাকের পলিপ, অ্যাজমা এবং অ্যালার্জেনের প্রতিক্রিয়ার আগের ইতিহাস থাকে।

# আপনার শরীরের অন্যত্র যদি মারাত্মক ক্রনিক কোনো ইনফেকশন থাকে। যেমন- ফুসফুসের নিউমোনিয়া।

# আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি ইমিউনোডেফিসিয়েন্ট হয়ে থাকেন। অর্থাৎ যদি দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।

অধ্যাপক, অ্যালার্জি বিভাগ

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল

দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist