ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ
ভুলে যাওয়া রোধে কী করবেন
সাধারণত ভুলে যাওয়া রোগের কারণগুলো হলো-বার্ধক্যজনিত কারণে, আলজেইমার রোগে, মাথায় আঘাত পেলে, মৃগী রোগ, হার্ট-অ্যাটাক, স্ট্রোক, ব্রেইন ইনফেকশন বা মস্তিষ্কে প্রদাহ হলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়ে প্রায় ভুলে যাওয়ার সমস্যায় বিভিন্নভাবে ভুগতে হতে পারে। তাছাড়া খাদ্যে প্রোটিন ও ভিটামিনের (বিশেষ করে Vit B1, B12) অভাব হলে, ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোনো মাদকে আসক্ত হলে, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ব্রেইন টিউমার হলে মনে না থাকার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায়ও অনেক সময় ব্যস্ততা বা অন্য কোনো কারণে ভুল হতে পারে। ভুলে যাওয়া রোধ করার জন্য নিয়মিত কিছু রুটিন মেনে চললে ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’-এর মতো ভুল করে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো অনেকটা কমানো যায়। যেমন-লিস্ট করে কাজ আগানো অক্ষম বা অথর্ব না হলে, সারা দিনের কাজগুলো পকেট নোটবুক বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডায়রিতে লিস্ট করে নিয়ে সুবিধা অনুযায়ী করে গেলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয় ও ভুলবশত কাজ পড়ে থাকে না। স্মার্টফোনের অ্যাপসের মেন্যুতে নোট করে রাখলে, ওটা সময়মতো অনেক কিছুই স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।
সবকিছু জায়গামতো গুছিয়ে রাখা : সেলফ, ড্রয়ার বা ঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে, শুধু দরকারি জিনিসগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে জায়গা মতো রাখা উচিত। যেন প্রয়োজনের জিনিসটি তার স্থান থেকে খুব সহজেই তুলে নেওয়া যায়।
মুঠোফোন, চশমা, চাবি ও মানিব্যাগের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন হওয়া দরকার। বাইরে কোথাও গেলে, এগুলো সঙ্গে আছে কি না তা দেখে নেওয়া ভালো। এ সময় বাসার ফ্যান, লাইট, চুলা ও বেসিনের কল বন্ধ আছে কি না তা চেক করে নেওয়া উচিত।
জরুরি কন্টাক্ট নাম্বার ও ঠিকানা : জরুরি কন্টাক্ট নাম্বারগুলো একাধিক মোবাইলে তুলে রাখার পাশাপাশি আপনজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়াপড়শি ও অন্য হিতৈষীদের নাম-ঠিকানা ডায়রিতে লিখে রাখা দরকার। প্রয়োজন ছাড়াও তাদের সঙ্গে গল্পগুজব ও সৃজনশীল কাজে মতবিনিময় করা যেতে পারে। দূরে হলেও স্কাইপিতে কথা বলতে পারলে মনে রেখে কথা বোঝাতে খুব সুবিধা হয়।
ওষুধের বাক্সের পরিচর্যা : নিত্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো একটা সুদৃশ্য ওষুধের বাক্সে, শোবার ঘরে চোখে পড়ার মতো সুবিধাজনক জায়গায় রাখা উচিত। চোখের সামনে পিল বক্স থাকলে ওটার দর্শনই ওষুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। ডাক্তারের নাম-ঠিকানা ও কন্টাক্ট নাম্বারসহ প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলোর নাম, ডোজ ও খাওয়ার সময়সহ কাগজে টাইপ করে বাক্সের গায়ে সেঁটে রাখা যায়। রোগীর বিশেষ কোনো সমস্যা থাকলেও (পেনিসিলিন বা অন্য কোনো অ্যালার্জি, হার্টে স্ট্যান্ট, পেসমেকার বা রিং পরা থাকলে) সেখানে উল্লেখ থাকতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম : রাতের নির্ঝঞ্ঝাট, আরামদায়ক ও পর্যাপ্ত ঘুম (অন্তত ৮ ঘণ্টা) ভুলোমনের মানুষদের ভালো থাকার একটা চমৎকার উপায়। রাতে বেশি খাদ্য গ্রহণ বা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুতে যাওয়া ঠিক নয়। ঘুমানোর কাছাকাছি সময়ে চা-কফি পান করা নিষেধ। ঘুমানোর স্থান যথাসম্ভব আওয়াজমুক্ত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া উচিত। রাতে দুধ, দই, কলা, আম, কাঁঠাল খেলে ভালো ঘুম হয়। ফ্রেশ ঘুম স্মরণশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
শরীরচর্চা বা হাঁটা : প্রত্যহ একই সময়ে আধঘণ্টা করে দ্রুত হাঁটা শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী। এটি ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকটা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস স্মৃতিশক্তি ও মনমানসিকতা ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে উত্তম জিনিস। নিয়মিত ব্যায়াম- উচ্চরক্তচাপ, রক্তের সুগার, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করে। যত বেশি হাঁটা যায়, ততই উপকার হয়।
ভুলে যাওয়া রোধে কাছের কেউ থাকলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াসহ অন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে খুব সুবিধা হয়। প্রয়োজনে কিছু স্বার্থের বিনিময়ে হলেও সে রকম একজন সঙ্গে থাকা ভালো। ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা ভেবে প্রিয়জনসহ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ও প্রয়োজনে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা, টাকা-পয়সা সঞ্চয়, মূল্যবান কাগজপত্রসহ অন্যান্য জিনিস প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা বিশেষ কোনো আপনজনের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।
ইয়ামাগাতা হাসপাতাল
লালমাটিয়া, ঢাকা।
"