ডা. মহসীন কবির লিমন

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

প্রবীণদের চোখে ছানি পড়ে কেন

বার্ধক্যে চোখে ছানি পড়া রোগ একটি সাধারণ সমস্যা। চোখে ছানি পড়লে ঝাপসা দেখাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। চোখের ভেতরে স্বচ্ছ একটি লেন্স বা দর্পণ রয়েছে। এ দর্পণের ভেতর দিয়ে আলো চোখের পেছনের রেটিনায় দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশে গিয়ে পড়ে এবং এতে আমাদের দেখার অনুভূতি তৈরি হয়, আমরা বস্তু দেখতে পাই। কাচ যেমন অস্বচ্ছ হয়ে গেলে এর ভেতর দিয়ে কোনো কিছু দেখা যায় না, তেমনি চোখের লেন্স যদি অস্বচ্ছ হয় তাহলে চোখের দৃষ্টিশক্তিও ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। আমাদের দেশে অন্ধত্বের প্রধান একটি কারণ এ ছানি রোগ। বার্ধক্যে বয়সজনিত কারণে লেন্সের গঠনগত পরিবর্তন হলো ছানি রোগের প্রধান কারণ। এ ছাড়া চোখের আঘাত, ঘন ঘন চোখের প্রদাহ, অপুষ্টি, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন-থেরাপি, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণেও ছানিরোগ হতে পারে। সাধারণত বয়স্ক লোকের চোখে, কারণ ভেদে যেকোনো বয়সে ছানিরোগ হতে পারে। পারিবারিকভাবে ছানি রোগের ইতিহাস থাকলে এবং গর্ভাবস্থায় টর্চ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে জন্মগত ছানি নিয়েও বাচ্চার জন্ম হতে পারে। ছানি রোগ হলে সাধারণত চোখে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো হলো দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া, বারবার চশমার পাওয়ার পরিবর্তিত হওয়া, আলোর চারদিকে রংধনু দেখা, একটি জিনিসকে দুই বা একাধিক দেখা, দৃষ্টিসীমায় কালো দাগ দেখা, আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়া ছানির কারণে চোখ ব্যথাও হতে পারে এবং বাচ্চাদের ছানি রোগের কারণে চোখ টেরা হয়ে যেতে পারে। যেহেতু বার্ধক্যে বয়সজনিত কারণে ছানি রোগ হয়, তাই বয়সজনিত ছানি রোগ প্রতিরোধে তেমন কিছুই করার নেই। তবে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ, চোখের অন্যান্য সমস্যায় সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া, অনিয়ন্ত্রিত হরমোন জাতীয় ওষুধ ও ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে ছানিরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ছানি রোগের প্রতিকার করতে কোনো ওষুধ নেই। ছানি রোগ হলে অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করতে হয়। রোগীর চোখে ছানি পড়া ছাড়া চোখে যদি আর কোনো সমস্যা না থাকে যেমন রেটিনা ও ভিট্রিয়াসে সমস্যা না থাকলে, অপারেশনের মাধ্যমে আবার আগের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায়। ছানি অপসারণের পর কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়, যা আগের স্বচ্ছ লেন্সের মতোই কার্যকর। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ফ্যাকো সার্জারির মাধ্যমে এখন অনেক কম সময়ে ছানি অপসারণ, লেন্স সংযোজন সেলাই ছাড়া করা সম্ভব। ফ্যাকো সার্জারি ছাড়া আরেকটি পদ্ধতি হলো ইনসিশন ছানি অপারেশন, যা এসআইসিএস নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিমি. কেটে, তার ভেতর দিয়ে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে ফ্যাকো সার্জারিতে অল্প কেটে ফ্যাকো মেশিন ব্যবহার করে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। ফ্যাকো সার্জারির সুবিধা হলো, অপারেশনের পর রোগী দ্রুত তার স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারে এবং অপারেশনের পর চশমার পাওয়ার কম পরিবর্তন করতে হয়।

জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও গবেষক

প্রিন্সিপাল, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন (আইজিএম)

বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ আগারগাঁও, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist