ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুদের অসুখ-বিসুখ
বাড়ির শিশু একটু অসুস্থ হলেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারের সবাই। আসুন শিশুর নানা রোগ সম্পর্কে কিছু ধারণা নেওয়া যাক-
জ্বর : অসুস্থ শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার প্রধান উপসর্গ হলো জ্বর। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকে ভাইরাসজনিত কারণে। কিন্তু মারাত্মক কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সেপসিস শিশুকে বিপদে ঠেলে দেয়। বর্তমানে রোগপ্রতিরোধক টিকাদানের সাহায্যে এ ধরনের মারাত্মক কিছু রোগ সংক্রমণ থেকে শিশুরা নিস্তার পাচ্ছে।
পেট ব্যথা : এটিও শিশু বয়সের এক প্রধান উপসর্গ। কোষ্ঠবদ্ধতা, মানসিক চাপ, ইউটিআই বা আন্ত্রিক অসুখ-এসবে মূলত শিশু পেট ব্যথার কথা বলে। তিন বছর বয়সের নিচে অ্যাপেনডিসাইটিস রোগ নির্ণয় ক্লিনিক্যালি বেশ কষ্টসাধ্য। গাভীর দুধ সহ্য না করতে পারলে শিশুর এ উপসর্গ দেখা দেয়। পেট ব্যথার সঙ্গে মলে রক্ত দেখা গেলে তা বিভিন্ন বয়সের শিশুর ভিন্ন ভিন্ন রোগের ধারণা দেয়।
শ্বাসকষ্ট : জ্বরে ভোগা শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিতে পারে। জ্বর, ঘাড় নাড়াতে সমস্যা, লালা ঝরা, ঢোক গিলতে অসুবিধা, শ্বাস-প্রশ্বাসে শাঁই শাঁই শব্দ, শ্বাস বন্ধ অবস্থা বা নীল হয়ে যাওয়া-এসব বিষয় এক্ষেত্রে অনুসন্ধান করতে হয়। ক্রুপের কারণে শিশু বয়সে শ্বাসের শব্দ দূর থেকে শোনা যায়। হিব ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে শিশু ইপিগ্লোটাইটিস নামে রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে।
বমি : বমি শিশু বয়সের সচরাচর উপসর্গ। ভাইরাসজনিত উদরাময় রোগে বা জি-ই
রিফ্লোক্সে এটি প্রায়ই হয়ে থাকে। অন্ননালির কোনো অবস্ট্রাকশনে পিত্তরস বমি হয়ে থাকে। বমির সঙ্গে রক্ত দেখা যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। যে বাচ্চার মাথার সাইজ বেশ দ্রুত বৃদ্ধি পায় বা হাইড্রোরকফালাসে ভোগা শিশু বমি নিয়ে আসে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুরোগী বেশি প্রস্রাব ও বমি নিয়ে হাজির হতে পারে। বমি, জ্বর এসব লক্ষণ মেনিনজাইটিস, কানপাকা অসুখে ভোগা রোগীতে থাকতে পারে।
শিশুর হুঁশ নেই-চৈতন্য লোপ পেয়েছে : এ ক্ষেত্রে শিশু কোনো জ্বরে ভুগছে কি না বা পীড়ার কথা বলেছে কি না জেনে নিতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার পরিবর্তন, ওষুধ সেবনের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত খুবই দুর্বলতা, বমি, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, কোনো কিছু খেয়ে ফেলা, মাথায় আঘাত, শারীরিক নির্যাতন- এসবের কারণ জানা চাই।
মস্তিষ্কে সংক্রমণ, যেমন-মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, মাথায় আঘাত পাওয়া বা পয়জনিংয়ে আক্রান্ত শিশুর এসব উপসর্গ দেখা যায়।
লেখক :
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
"