ডা. জান্নাতুল শারমীন জোয়ার্দার
ব্রণমুক্ত সুন্দর ত্বক
ত্বক নিয়ে মানুষের ভাবনা সেই আদিকাল থেকেই। সুস্থ-সবল মানুষ চায় নিজের ত্বকটি সুন্দর ও সতেজ থাকুক। মানুষের ত্বকের গঠন বেশ জটিল, এটি পুরো শরীরকে ঢেকে রাখে। ত্বক মূলত তিনটি কাজ করে থাকেÑদেহের ভেতরের গঠনকে রক্ষা করে, শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষের দূষিত উপাদান শরীরের বাইরে বর্জন করে। কিন্তু ত্বকের যে সমস্যাটি আধুনিক মানুষকে ভাবায় তার নাম ব্রণ। ব্রণ ত্বকের সাধারণ রোগ হলেও দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়ার কারণে এটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। ব্রণকে যতেœর সঙ্গে সারিয়ে না তুললে শেষ পর্যন্ত এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা সৃষ্টি করে। ব্রণ দেহের চর্বিযুক্ত সেবাকাস টিস্যুতে বেশি দেখা যায়। যেমন- মুখ, ঘাড়, বুক ও কাঁধে।
সাধারণত কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেমেয়েরা এ রোগে বেশি ভোগে। তৈলাক্ত ত্বকেই ব্রণ বেশি হতে দেখা যায়। এদিকে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সের পর এর প্রভাব কমে গিয়ে তা ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়। ব্রণের ফলে মুখম-ল ও ঘাড়ের ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, গুটি এবং ক্ষতচিহ্ন ও মুখম-লের ত্বকে ছোট ছোট কালো তিল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এতে মূলত ত্বকে আক্রান্ত হওয়া অংশগুলো হলো- কপাল, কপালের পাশে, গলা, চিবুক, বুক ও পিঠ। এগুলো সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়িয়ে যায়। ব্রণ বেশি দিন স্থায়ী হলে মুখে বিশ্রী দাগ দেখা যায়। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এ রোগে বেশি ভোগে। এর সঠিক কারণ অবশ্য নির্ণয় করা যায়নি। তবে মেয়েদের ত্বকের নিচে চর্বির পরিমাণ বেশি এবং হরমোনের পরিবর্তনগুলোও ছেলেদের চেয়ে বেশ প্রকট হওয়ায় ব্রণ দেখা যায় বলে ধারণা করা হয়।
ভুল খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত আহার গ্রহণ, অনুপযোগী খাবার, অত্যধিক শর্করা, অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার ইত্যাদির জন্য ব্রণ দেখা দিতে পারে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ। অত্যধিক চা, কফি ও অ্যালকোহল পান, তামাক সেবন ইত্যাদিও এর কারণ। আবার বয়ঃসন্ধিক্ষণে রাত জেগে পড়াশোনা ও বসে থাকার ফলে বদহজম সৃষ্টি হওয়া, সাধারণ দুর্বলতা ও টেনশন থেকেও ব্রণ হতে পারে। দিনে পর্যাপ্ত পানি এবং তেল-ঝাল-মসলাবিহীন খাবার খাওয়া উচিত। চিনি ছাড়া লেবুর পানি, তাজা ফলের রস, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, আনারস খেতে পারলে ভালো হয়। কাঁচা সবজি, অঙ্কুরিত ছোলা, ডাল, কাঁচা বাদাম, যব ও লাল চাল ব্রণের জন্য খুবই কার্যকরী। অধিক শর্করা, অধিক মিষ্টি, অধিক চর্বি পরিহার করা উচিত। তেলে ভাজা খাবার, কোমলপানীয়, কড়া চা ও কফি, অ্যালকোহল ইত্যাদি খাওয়ার কারণে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়। দেখা যায়, খাবারে লায়াসিন, জিঙ্ক, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’ এবং ভিটামিন বি-৬ ব্যবহারে ব্রণ দূর হয়। যে কোনোভাবেই হোক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা প্রয়োজন। চিকিৎসক এবং ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রণ হলে ত্বকের যতœ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। মারাত্মক অবস্থায় ওষুধ সেবন করাই ভালো। মুখের ত্বকের যতœ হলো-প্রথমে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তাছাড়া শসা ও গাজরের রস মুখে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। পরিমিত খাবার খাওয়া, অধিক রাত না জাগা, শরীরে ধুলাবালি-ঘাম জমতে না দেওয়া, অ্যাসিডিটি হতে না দেওয়া ও বেশি করে পানি পান করা ব্রণের ঝুঁকি কমায়। মাঝেমধ্যে ত্বকে গরম পানির ভাপ নিলে ভালো হয়।
ব্রণ সারাতে খনিজ লবণের মধ্যে জিঙ্ক, ভিটামিন ‘ই’ এবং ভিটামিন বি-৬ ভালো কাজ করে। আর এসব উপাদান পেতে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় শস্যজাতীয় খাবার, মাছ, কলিজা, মসুর ডাল, বরবটি, পনির, দুধ, কর্নফ্লেকস, ডিম, তেল, মুলাজাতীয় সবজি, বাদাম, সবুজ সবজির পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকতে হবে। তাই আর টেনশন নয়, প্রতিদিনের জীবনযাপনে একটুখানি পরিবর্তনই আপনার ত্বককে রাখতে পারে সুন্দর, সতেজ ও ব্রণমুক্ত।
লেখক:
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
ডক্টরস ভিউ, শংকর বাসস্ট্যান্ড, ধানমন্ডি, ঢাকা
"