ডা. মো. জাহেদ পারভেজ
বংশগত টাক
বংশগত টাককে মেডিক্যাল ভাষায় মেল প্যাটার্ন হেয়ার লস অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মাথার মাঝখানে ও কপালের দুই পাশ থেকে আস্তে আস্তে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং এক পর্যায়ে চুল পড়ে মাথা খালি হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। এ জাতীয় টাক হওয়ার কারণ, টেস্টোস্টেরন নামে হরমোন মাথার ত্বকের ওই স্থানগুলোতে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরনে (ডিএইচটি) পরিণত হয় এবং এ ডিএইচটির প্রভাবে প্রথমে মোটা চুল, পরে পাতলা চুল এবং একপর্যায়ে হেয়ার ফলিকল (চুলের গোড়া) শুকিয়ে গিয়ে চুল সম্পূর্ণভাবে ঝরে যায়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন ডিএইচটিতে পরিণত হতে একটি এনজাইমের প্রয়োজন ছিল। সেই এনজাইমের নাম ৫-আলফা রিডাকটেজ। সুতরাং এ ৫-আলফা রিডাকটেজের কার্যকারিতা যাদের মাথার ত্বকে বেশি, তাদেরই এ জাতীয় টাক পড়ে। এ কার্যকারিতা বেশি বা কম হওয়াটা নির্ভর করে জেনেটিকের ওপর। অর্থাৎ বংশগত প্রভাবের ওপর। তাই এ জাতীয় টাককে বংশগত টাক বলা হয়। অর্থাৎ বাবার মাথায় টাক থাকলে ছেলের মাথায় টাক পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে নতুন চিকিৎসার ব্যবস্থা এসেছে তা হচ্ছে, ৫-আলফা রিডাকটেজ এনজাইমকে কার্যকর হতে না দেওয়া। ফলে টেস্টোস্টেরন থেকে ডিএইচটি তৈরি হতে না পারা এবং ডিএইচটি তৈরি হতে না পারলে চুলের গোড়া শুকিয়ে যাবে না এবং টাকও পড়বে না। ওষুধটির বৈজ্ঞানিক নাম ফিনাস্টেরয়েড। এ ফিনাস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ কিন্তু কয়েক বছর আগে থেকেই বাজারে আছে যেমন- প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়ার চিকিৎসায় (তবে ডোজ ভিন্ন ব্যবহৃত হতো)। এত দিন একটি ধারণা ছিল, এ জাতীয় ওষুধ যৌনশক্তি কমাতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, যৌনশক্তি রক্ষার জন্য যে রিসেপ্টর (এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর) রয়েছে তার ওপর এর কোনো প্রভাব নেই। তবে পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ জাতীয় সমস্যা এক থেকে তিন শতাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করে দিয়ে অথবা ওষুধ চালিয়ে গিয়েও কাটিয়ে উঠেছেন অনেকে। রোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা নেওয়াই মঙ্গল। কাজেই বংশগত টাক পড়ার আশঙ্কা থাকলে এ ওষুধ সেবনে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা রয়েছে। যত দিন মাথায় চুল প্রয়োজন, ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। তবে এরই মধ্যে যাদের টাক পড়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে কি এ ওষুধ কোনো উপকারে আসবে? হ্যাঁ আসবে, তবে সামান্য। অর্থাৎ প্রতিদিন এক মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট অন্ততপক্ষে তিন মাস সেবনের পর থেকে টাক পড়া স্থানে চুল গজাতে শুরু করবে।
মহিলাদের কি কখনো ছেলেদের মতো টাক হতে পারে? হ্যাঁ, হতে পারে। মেনোপজ হওয়ার পর অর্থাৎ ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে তখন ফিমেল হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, মেল হরমোন বা টেস্টোস্টেরন/এন্ড্রোজেনের আধিক্য বেড়ে যায় এবং একই নিয়মে ছেলেদের মতো টাক পড়ে। ঠিক একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কি ওই একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কি ওই একই চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? হ্যাঁ, নেওয়া যাবে এবং উপকারও পাবে। তবে খুব সাবধান। অর্থাৎ মাসিক হচ্ছে গর্ভধারণ করার ক্ষমতা বা বয়স রয়েছে এমন মহিলারা যেন চুলপড়া রোধে এ জাতীয় ওষুধ সেবন না করেন। তাদের ক্ষেত্রে এটি সেবনে গর্ভের শিশু জন্মগত ক্ষতির ঝুঁকি থাকে এমনকি গর্ভধারণে সক্ষম বয়সের মহিলাদের খালি হাতে এ জাতীয় ওষুধ ধরাই নিষেধ, খাওয়া তো দূরের কথা। টাক পড়তে না দেওয়া এবং টাক পড়া মাথায় চুল গজানোর এটিই প্রথম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন উন্নতমানের ওষুধ। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ব্যবহার করতে হবে।
লেখক :
চুলবিশেষজ্ঞ ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন
আরোরা স্কিন অ্যান্ড এয়েস্থেটিকস
"