ডা. মুনতাসীর মারুফ
শিশু স্কুলে যেতে চায় না কেন
স্কুলে অনেক সময় কিছু শিশু অন্য শিশুকে অপদস্থ করে, ব্যঙ্গাত্মক নামে ডাকে, সামাজিকভাবে বয়কট করে। সাধারণত একই ক্লাসের শক্তিশালী শিশু একা বা দলবদ্ধভাবে দুর্বল কোনো শিশুকে উত্ত্যক্ত করে। আবার উপরের ক্লাসের শিশুরাও নিচের ক্লাসের শিশুদের ভয়ভীতি দেখায়। এটিকে ‘বুলিং’ বলা হয়। বিভিন্ন কারণে বুলিং হতে পারে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, দুর্বল দৈহিক গঠন, অন্তর্মুখী স্বভাবের শিশুরা বুলিংয়ের শিকার বেশি হয়। বুলিংয়ের শিকার শিশুরা পরবর্তী সময় বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারে। তারা হীনম্মন্যতায় ভোগে, হতাশা বোধ করে ও বিষণœতায় আক্রান্ত হয়। অনিদ্রা, খাওয়ায় অরুচিসহ নানা শারীরিক উপসর্গও দেখা দেয়। আত্মবিশ্বাস কমে যায়। অনেকে স্কুলে যেতে ভয় পায়। স্কুলে অনুপস্থিতির হার বাড়তে থাকে। ফল খারাপ হয় এমনকি এক সময় পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এদের আত্মহত্যার ঝুঁকিও অন্যদের চেয়ে বেশি। এসব শিশুর মানসিক সমস্যাগুলো বড় হওয়ার পরও থেকে যেতে পারে। যারা বুলিং করে তারাও নানা ধরনের সমস্যায় ভোগে। তাদের ভেতর স্কুল পালানো এবং পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এদের মধ্যে মাদকাসক্তি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হার বেশি।
‘বুলিং’ প্রতিরোধে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রত্যাশিত এবং বর্জনীয় আচরণ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দিতে হবে। উত্ত্যক্ত করার প্রভাব এবং তা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মচারী, যেমন- মালি, দারোয়ান, পিয়ন এদেরও বিশেষ শিক্ষা দিতে হবে। ক্লাসে বক্তৃতা, খোলামেলা আলোচনা, বিষয়ভিত্তিক রচনা, নাটিকা, গান প্রভৃতির মাধ্যমে শিশুদের বুলিং-প্রতিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা যায়। অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থা বলতে উত্ত্যক্তকারী শিশুকে শাস্তি দেওয়া বা স্কুল থেকে বের করে দেওয়া নয়, বরং তাকে প্রত্যাশিত আচরণের জন্য শিক্ষা দিয়ে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বুলিংয়ের শিকার শিশুকে সহপাঠী, শিক্ষক, স্কুল কর্তৃপক্ষ, পরিবার সবার সহযোগিতা করতে হবে। প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিতে হবে। সম্ভব হলে প্রতিটি স্কুলে কাউন্সিলর বা সাইকোলজিস্ট নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কেউ যেন উত্ত্যক্তকারী হিসেবে গড়ে না ওঠে এ ব্যাপারে বাবা-মাকেও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে।
লেখক :
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল
"