ডা. আবু সাঈদ শিমুল

  ২৮ মে, ২০১৭

শিশুর চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া রোগটির কথা আমরা এখন অনেকেই জানি। বড়দের মতো শিশুদেরও এ রোগ হতে পারে। খুব ছোট শিশু এমনকি দুই বছরের কম বয়সী শিশুদেরও এটি হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া শব্দটি এসেছে আফ্রিকান মারুন্ডি ভাষা থেকে। এর অর্থ ভেঙে যাওয়া বা বাঁকা হওয়া। ১৯৫২-৫৩ সালে তানজানিয়াতে এই রোগের আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীকালে ১৯৬০ সালে দক্ষিণ এশিয়াতে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। ১৯৬০ সালে ব্যাঙ্ককে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। কলকাতা, ভেলোর ও মহারাষ্ট্রে ১৯৬৪ সালে, শ্রীলঙ্কায় ১৯৬৯ সালে এই রোগ দেখা দেয়। ২০০৫-২০০৬ সালে ভারতে আবার চিকুনগুনিয়া রোগ দেখা যায়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাজশাহীতে চিকুনগুনিয়া দেখা দেয়।

রোগের লক্ষণ

এ রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ে ব্যথা, চোখের কোটরে ব্যথা ইত্যাদি। তিন থেকে পাঁচ দিনে যখন জ্বর কমতে শুরু করে তখন চুলকানি এবং র‌্যাশ বা লাল লাল দানা দেখা যেতে থাকে। এই র‌্যাশ দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকের র‌্যাশ থাকে না। এর পরিবর্তে কালচে বাদামি বা ধূসর রঙের দানা থাকে। আবার বড়দের মতো হাড়ে ব্যথা কম সংখ্যক বাচ্চারই থাকে। তবে যেসব বাচ্চার হাড়ে ব্যথা হয়, তাদের ক্ষেত্রে ব্যথার মাত্রা তীব্র হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যতিক্রম হলো মগজ বা স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা। একে আমরা নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ বলে থাকি। এগুলো শিশুর বেশি হয়। যেমন- খিচুনি, এনকেফালাইটিস। সাধারণত যেকোনো ভাইরাস জ্বর ধীরে ধীরে বাড়ে। তবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত অনেক বাচ্চার হঠাৎ করে তীব্র জ্বর আসতে পারে।

ডেঙ্গুর মতো এ রোগটি অ্যাডিস মশার মাধ্যমে ছড়ালেও ডেঙ্গুর সঙ্গে এর কিছুটা পার্থক্য আছে। ডেঙ্গুতে হাড়ে ব্যথা হলেও প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হয় না, তবে এই রোগে হাড়ে প্রদাহ হয়। তাই হাড়ে ও গিরায় তীব্র ব্যথা হয়।

আবার ডেঙ্গুতে রক্তের অণুচক্রিকা বা প্ল্যাটিলেট কমে গিয়ে রক্ত পড়ার আশঙ্কা থাকে, তবে চিকুনগুনিয়ায় সেই আশঙ্কা কম। ডেঙ্গুতে রক্তনালির অভ্যন্তরীণ তরল বা ইন্ট্রা ভাস্কুলার ফ্লুইড কমে গিয়ে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এমনকি শিশু শকেও চলে যেতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়াতে প্লাজমা লিকেজ ও শকের আশঙ্কা কম।

রোগ নির্ণয়

লক্ষণ দেখে এবং সাধারণ কিছু পরীক্ষার সাহায্যে চিকুনগুনিয়া মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। তবে অবশ্যই ডেঙ্গুর জন্য টেস্ট দিয়ে নিশ্চিত হতে হবে, এটা ডেঙ্গু কি না। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া রোগে অ্যান্টিবডি টেস্টও আছে। তবে প্রায় ক্ষেত্রে এটির প্রয়োজন হয় না।

চিকিৎসা

সাধারণত পর্যাপ্ত পানি, তরল, ডাবের পানি, ফলের জুস ইত্যাদির সঙ্গে বয়স অনুযায়ী প্যারাসিটামল খেলে এই রোগ সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। হাড়ে বা জয়েন্টে ব্যথা হলে বরফ লাগিয়ে দিলে ব্যথা কমবে। ব্যথা একটু কমে এলে ফিজিওথেরাপি দেওয়া যাবে। চিকুনগুনিয়া রোগে হাড়ে ব্যথা এক থেকে দুই মাসও থাকতে পারে। তবে দশ দিনের বেশি হাড়ে ব্যথা স্থায়ী হলে এবং ডেঙ্গু নয় বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হলে, সেক্ষেত্রে ব্যথানাশক দেওয়া যেতে পারে। এই রোগে বেশির ভাগ বাচ্চা সাত থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায় এবং বাসায় রেখেই চিকিৎসা করানো যায়। তবে ব্যথা তীব্র হলে, রক্তপাত হলে, শিশুর খিচুনি হলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে, বাচ্চার বয়স এক বছরের কম হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist