ডা. মুনতাসীর মারুফ
কিভাবে বুঝবেন শিশুর বিষণ্নতা
বাচ্চা মানুষের আবার মন কী, মন খারাপই বা কিসের? শিশু হাসবে, খেলবে, ফুর্তি করবেÑ দুনিয়াদারির কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই যাদের, তাদের আবার মন খারাপ হবে কেন? এমনটাই ধারণা বয়সী অনেকের। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বড়দের মতো শিশুরাও বিষণ্নতায় ভোগে। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, ৭ বছরের কম বয়সী শিশুও বিষণœতায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিষণ্নতায় আক্রান্তের হার বা ঝুঁকি বাড়ে।
কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি মানুষেরই, এমনকি শিশুরও কখনো না কখনো মন খারাপ হতে পারে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিনই এবং দিনের অধিকাংশ সময় মন খারাপ থাকলে, কোনো কাজকর্মে উৎসাহ না পেলে, ঘুম ও খাওয়ার রুচি কমে গেলে, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, ধীরগতি, নেতিবাচক চিন্তা, মৃত্যুর চিন্তা, আত্মহত্যার প্রবণতা প্রভৃতি দেখা দিলে ব্যক্তি বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করা যায়। এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে শিশুরও। তবে শিশুর চিন্তা-ভাবনা বা প্রকাশের ক্ষমতা বড়দের মতো হয় না বলে অনেক ক্ষেত্রে মন খারাপ হওয়ার কথা শিশু নাও বলতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে বিরক্তি, অস্থিরতা এবং খিটখিটে মেজাজই বিষণ্নতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। অনেক শিশু বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, যেমন- মাথাব্যথা-পেটব্যথার অভিযোগ করে, যারা প্রকৃতপক্ষে ভুগছে বিষণ্নতায়। এছাড়া স্কুলে যেতে অনীহা, লেখাপড়ায় মনোযোগ না পাওয়া, সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে ও খেলতে অনাগ্রহ, একা একা চুপচাপ থাকা প্রভৃতি উপসর্গও দেখা দেয়। এসব উপসর্গ দেখা দিলে বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে। শিশু আসলেই বিষণ্নতায় ভুগছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
"