মো. আরিফুর রহমান ফাহিম
ইয়াবা সেবন মানেই জীবন্ত লাশ
ইয়াবা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। এ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। নেশার এই উপকরণের মূল উপাদান মিথাইল অ্যাম্ফিট্যামিন এবং ক্যাফিন। ইয়াবা একটি থাই শব্দ, যার অর্থ- ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ। ইয়াবা খেলে সাময়িক আনন্দ এবং উত্তেজনা হলেও অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব, আগ্রাসী প্রবণতা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, ঘাম, কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক সঙ্গের ইচ্ছা বেড়ে যায়। বাড়ে হৃৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা। মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হতে থাকে এবং কারো কারো এগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। কিছুদিন পর থেকে ইয়াবাসেবীর হাত-পা কাঁপে, হ্যালুসিনেশন হয় এবং পাগলামি ভাব দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ইয়াবা সেবন করলে স্মরণশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারো কারো সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। লেখাপড়ায় খারাপ হয়ে একসময় ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধপ্রবণতা, এমনকি আত্মহত্যাও করে থাকে। মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে অনেকে মারা যায়, ড্রাগের ওর্ভাডোজেও মারা যায়, অনেকে আবার রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এছাড়া ইয়াবা সেবনে খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল এবং ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে। আবার ইয়াবায় অভ্যস্ততায় মনে সৃষ্টি হয় হতাশা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা। এই মাদক সাধারণ শান্ত ব্যক্তিকেও হিং¯্র ও আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে। ইয়াবা গ্রহণে হ্যালুসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়া হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। হ্যালুসিনেশন হলে রোগী উল্টাপাল্টা দেখে, গায়েবি আওয়াজ শোনে। আর প্যার্যানয়্যায় ভুগলে রোগী ভাবে, অনেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে। তারা অনেক সময় মারামারি ও সন্ত্রাস করতে পছন্দ করে। অন্যদিকে, ইয়াবা সেবনে যৌবন ও জীবনীশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ইয়াবা সেবনকারীদের দাম্পত্য জীবন চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। ইয়াবা সেবনকারীদের নার্ভ বা স্নায়ুগুলো দুই-তিন বছরের মধ্যে অচল হয়ে যায়। কেউ যদি দীর্ঘস্থায়ী ইয়াবায় আসক্ত হয়ে যায়, তাহলে প্রচুর টাকা খরচ করেও আর স্বাভাবিক জীবন এবং সুস্থ দেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। হয়তো আংশিক সুস্থ করা যাবে, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইয়াবাসেবী থাকবে জীবন্ত একটি লাশের মতো। তখন কিছুই করার থাকবে না। তাই আমাদের সবার উচিত ইয়াবার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
"