অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

  ১৭ মে, ২০১৭

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হলিস্টিক পদ্ধতি

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস (১৪ নভেম্বর) থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবারকার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বেছে নেওয়া হয়েছে ডায়াবেটিসকেই। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এই দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতি বছর সংস্থাটি এমন একটি স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নেয়, যা সারা পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এই দিবসটি। এবারকার বিশ^ স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিসকে হারিয়ে ভালো থাকুন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের ফোকাস হিসেবে ডায়াবেটিসকে বেছে নেওয়ার পেছনে কাজ করছে তিনটি বিষয়-

নম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং মানবজীবনে রোগটির বড় বোঝা হয়ে ওঠা ও তার পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

ডায়াবেটিসকে মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট, কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায় নির্ধারণ করা, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও যতেœ কাজে আসবে।

ডায়াবেটিসের ওপর প্রথম গ্লোবাল রিপোর্ট উপস্থাপন, যা মানবজীবনে রোগটির বড় বোঝা হয়ে ওঠা এবং তার পরিণতি সম্পর্কে জানাবে। স্বাস্থ্যরীতির উন্নয়নে নজরদারি নিশ্চিত করবে, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে এবং ডায়াবেটিসের কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে।

বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ, বছরে বাড়ছে আরো এক লাখ রোগী। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রতি বছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর মধ্যে এই রোগ প্রাধান্য বিস্তার করছে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

পৃথিবী দিন দিন আধুনিকতা বা নগরায়ন বা সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কুফল হচ্ছে স্ট্রেস। সেই স্ট্রেসের জন্যই আজ বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও করোনারি আর্টারি ব্লকেজ। প্রচলিত চিকিৎসায় নিয়ম-কানুন, যথা-শারীরিক ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ দিয়ে শুধু শারীরিক উন্নতি ঘটে। কিন্তু আধ্যাত্মিক ও মানসিক উন্নতির কোনো চেষ্টা করা হয় না এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর ব্যাপারেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এজন্যই প্রচলিত চিকিৎসায় রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হতে পারে না। হলিস্টিক পদ্ধতি হলো হোল বডি তথা সারা শরীরের উন্নতি; যথা- আত্মা, মন ও দেহের। আত্মা, মন ও দেহের উন্নতির মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য হলিস্টিক পদ্ধতি এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হলিস্টিক পদ্ধতি হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীন প্রাকৃতিক পদ্ধতির আশ্চর্য সমন্বয়। এই চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি হলো লাইফস্টাইলে পরিবর্তন, মানসিক চাপ কমানোর কৌশল, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ, যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, মেডিটেশন, নিউরোবিক জিম ও আকুপ্রেশার। মানসিক চাপই মানুষের অসুখ ও অশান্তির মূল কারণ। মানসিক চাপ কমানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক দশক ধরে হলিস্টিক হেলথকেয়ার সেন্টার হলিস্টিক চিকিৎসায় দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে হাজার হাজার করোনারি আর্টারি ব্লকেজ এবং উচ্চরক্তচাপসহ ডায়াবেটিক রোগীর জীবনে সুবাতাস বয়ে এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসছে, তেমনি অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিক রোগীদের জীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে। বহু রোগী ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে, আবার অনেকে ইনসুলিনকে বিদায় দিয়েও চমৎকার জীবনযাপন করছে।

বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হওয়ায় অনেক দরিদ্র ডায়াবেটিক রোগী ওষুধ কিনতে পারে না। আবার অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়াবেটিক সেন্টারও নেই। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধের অভাবে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, আবার অনেক ধনাঢ্য ডায়াবেটিক রোগী কাঁড়ি কাঁড়ি ওষুধ ও ইনসুলিন নিতে চায় না। দরিদ্র ও ধনাঢ্য- সব রোগীর জন্যই কম খরচ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি হলো হলিস্টিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এতদিন ঢাকার পান্থপথ এবং চট্টগ্রামের মমিন রোডের হলিস্টিক সেন্টারে ছোট পরিসরে কার্যক্রম চলত। এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের ‘ডায়াবেটিসকে হারিয়ে ভালো থাকুন’ প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর পরিসরে কার্যপরিধি বাড়ানোর জন্য ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবরে শুভ উদ্বোধন করা হচ্ছে ‘হলিস্টিক ডায়াবেটিস ক্লাব’। ধীরে ধীরে এর কর্মপরিধি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার কাছে প্রসারিত করা হবে। কম খরচ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন হলিস্টিক চিকিৎসা পদ্ধতি ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে সুবাতাস বয়ে আনবে। তাছাড়া যাদের ডায়াবেটিস নেই বা যারা প্রি-ডায়াবেটিস স্টেজে আছে, তারাও এই রোগ থেকে মুক্তির আলো পাবে। আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।

লেখক : পরিচালক, হলিস্টিক হেলথকেয়ার সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist