ডা. মিরাজ আহমেদ
কান যখন চুলকায়
কিছুদিন ধরে কটন বাড খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে আপনার। কোন ড্রয়ারে, কোথায় রাখা আছে, ভালোই জানা হয়ে গেছে। কারণ, কান চুলকায়। এমনটি হয় অনেকেরই। অসুখটির নাম অটোমাইকোসিস।
কেন হয়
রোগটা সেসব দেশেই বেশি হয়, যেখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। যেমন, বাংলাদেশ।
রোগটা তাদেরই বেশি হয়, যারা কোনো কারণবশত দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছে, যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
কারণ
চুলকানি হয় ছত্রাক জাতীয় জীবাণু থেকে। এরা হচ্ছে উদ্ভিদ। দেহের অন্যত্র এটি থেকে দাদসহ বিভিন্ন রোগ হয়। এদের মধ্যে অ্যার্স্পাজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এবং ক্যান্ডিডা অ্যাল্বিক্যান্স দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ। এছাড়া ডার্মাটোফাইট ও অ্যাক্টিনোমাইসেসের মাধ্যমেও কখনো কখনো রোগটি হতে পারে।
উপসর্গ
কান বন্ধ হয়ে আছে এমন উপলব্ধি।
কানে অস্বস্তি।
কান থেকে ধূসর, সবুজ, হলুদ বা সাদা রঙের পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে।
জমা হতে পারে ভেজা খবরের কাগজের মতো ময়লা।
চিকিৎসা
কানের ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
ছত্রাকবিনাশী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- নাইস্ট্যাটিন ক্রিম, ক্লোট্রিমাজল, ইকোনাজল ও জেন্টিয়ান ভায়োলেট।
ওষুধগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে হাইড্রোকর্টিসন যুক্ত থাকলে তা ড্রাগের প্রতি টিস্যুর অতিসংবেদনশীলতা রোধ করে এবং কানে জ্বালা করার ভয় কমায়। ক্রিম বা ফোঁটা আকারে এগুলো ব্যবহার করা যায়। দুই সপ্তাহব্যাপী ব্যবহার করলে রোগটি ফিরে আসার আশঙ্কা কমে যায়।
অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ
এছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তাহলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসাও করণীয় হয়ে পড়ে।
খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দার অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি বহিঃকর্ণের। কিন্তু কানপাকা রোগীদের অর্থাৎ, মধ্যকর্ণের প্রদাহের কারণে যাদের কানের পর্দায় ছিদ্র থাকে, তাদের কানেও মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে।
প্রতিরোধ
চাই সাধারণ স্বাস্থ্য কুশলতা উন্নয়নের প্রয়াস এবং ভিটামিন ও পুষ্টির মান বাড়ানো।
মাঝেমধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নেওয়া।
ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
নিরুৎসাহিত করা চাই কান চুলকানোয় দিয়াশলাইয়ের কাঠি, মোড়ানো রুমাল, মুরগির পালক, চাবি এবং কটন বাডের ব্যবহার।
লেখক : নাক, কান ও গলাবিশেষজ্ঞ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
"