ডা. মো. মফিজুর রহমান রাজীব

  ০৫ আগস্ট, ২০২০

শিশুর জন্মগত হৃদরোগ

জন্মগত হৃদরোগ এমনই একটি রোগ, যার শুরু মায়ের গর্ভে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে আট শিশুই হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।

জন্মগত হৃদরোগ কাকে বলে

মায়ের গর্ভে থাকাকালে শিশুর হৃদযন্ত্র তৈরি ও বিকশিত হওয়ার প্রাক্কালেই যদি কোনো ধরনের ত্রুটি হয় এবং শিশু সেই হৃদযন্ত্র নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, তবে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলে। অনেক সময় একে শিশুর হার্টে ছিদ্র আছে এমন শব্দও ব্যবহার করা হয়।

কারণ : জন্মগত শিশু হৃদরোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে গর্ভাবস্থায় ও গর্ভ পরিকল্পনাকালে বিভিন্ন ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য, রেডিয়েশন, মায়ের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি রোগ, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা সংক্রমণ ইত্যাদির সঙ্গে শিশু হৃদরোগের যোগসূত্র পাওয়া যায়। এ ছাড়া জেনেটিক কিছু রোগ যেমন ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome), টারনার সিনড্রোম (Turner Syndrome) নিয়ে জন্মানো শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ : জন্মের পর থেকে ঘন ঘন ঠান্ডাকাশি ও শ্বাসকষ্ট, মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে অসুবিধা ও অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া, হাত ও পায়ের আঙুল ও ঠোঁটে নীলাভ ভাব, ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধির অপ্রতুুলতা ইত্যাদি।

শিশুর প্রতি মায়ের লক্ষণীয় বিষয়

১. শিশু জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা।

২. ভীষণ আকারে কালচে বা নীলাভ ভাব তার ঠোঁটে বা চামড়ায় দেখা যাচ্ছে কিনা।

৩. শিশুর হার্টবিট যদি অস্বাভাবিক ধরনের কম বা বেশি হয় অথবা ছন্দোবদ্ধ না হয়ে অস্বাভাবিকভাবে চলে কিনা।

৪. বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর মায়ের দুধপান করার সময় হাঁপিয়ে যায় কিনা।

৫. অল্প অল্প দুধপান করে ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দিয়ে আবার কিছু সময় পর দুধপান করছে কিনা।

৬. দুধপান করার সময় শিশু অস্বাভাবিক ঘামছে অথবা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা।

৭. শিশুটি অন্য বাচ্চাদের মতো ওজনে বাড়ছে কিনা।

৮. জন্মের পর থেকেই শিশুর বারবার ঠান্ডা কাশি লেগেই আছে কিনা এবং সে কারণে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে।

৯. শিশুটি কান্নার সময় অস্বাভাবিক কালো হয়ে যায় এবং একইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়। একটু বড় বাচ্চা খেলার সময় অল্প দৌড়াদৌড়ি করলেই কালো হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয় এবং ওপড় করে শুইয়ে দিলে বা বড় বাচ্চারা হাঁটু গেড়ে বসলে তাদের স্বস্তি আসে। বড় বাচ্চাদের কখনো কখনো বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদিও হতে পারে।

ওপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই শিশুকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

রোগ নির্ণয় : একটি পরীক্ষা যদি করা হয় রোগ শনাক্তের জন্য তাহলে সেটা হলো কালার ডপলার ইকোকারডিওগ্রাফি (Color Doppler Echocardiograph)। এখন মোটামুটি সব হাসপাতাল বা হৃদরোগ সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ইকোকারডিওগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও চেস্ট এক্স-রে, ইসিজি, হলটার মনিটরিং, ক্যাথ স্টাডি, কার্ডিয়াক সিটিস্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি।

লেখক : ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, খিলগাঁও ডায়াবেটিক ও স্পেশালাইজড ডক্টরস চেম্বার

খিলগাঁও চৌরাস্তা, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close