ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
হাঁপানির সর্বাধুনিক চিকিৎসা
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বর্তমান বিশ্বে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা ২০ কোটির বেশি এবং প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এ রোগের কারণে। এর মধ্যে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৪ লাখের মতো। অন্যদিকে একই রিপোর্টে প্রকাশিত হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি। প্রতি বছর নতুন করে আরো প্রায় ৫০ হাজার লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মাত্র ৫ শতাংশ রোগী এ রোগের যথার্থ চিকিৎসা পাচ্ছে (২ শতাংশ রোগী বিদেশে বা পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে)। এ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল এবং চিকিৎসক কম হলেও আধুনিক চিকিৎসা যে নেই, তা বলা যাবে না। সরকারি হাসপাতাল এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যেখানে সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান। রোগের ধরণ অনুযায়ী কম বা বেশি সময় হলেও এ রোগ থেকে রোগীকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র ৫ শতাংশ রোগী কেন চিকিৎসা পাচ্ছেন? এর বড় কারণ রোগীদের অসচেতনতা, কুসংস্কার ইত্যাদি। অনেকেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন না। চূড়ান্তভাবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও অনেকে অজ্ঞতাবশত তথাকথিত ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ ইত্যাদি চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগের জটিল অবস্থায় উপনীত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।
হাঁপানি রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণ
* বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ।
* শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট।
* দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা।
* ঘন ঘন কাশি।
* বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব।
* রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা।
হাঁপানি রোগের প্রধান কারণগুলো
* মাইট।
* মোল্ড।
* ফুলের রেণু বা পরাগ।
* ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়া।
* খাদ্যদ্রব্য।
*ঘরের ধুলা-ময়লা।
* প্রাণীর পশম এবং চুল।
* ওষুধসহ কিছু রাসায়নিক দ্রব্যাদি।
* প্রসাধন সামগ্রী।
* উগ্র সুগন্ধী বা তীব্র দুর্গন্ধ।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা
* রক্তের বিশেষ পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে।
* স্কিন প্রিক টেস্ট : এ পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এ পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে।
* স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতা দেখা : এ পরীক্ষা করে রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায়।
সমন্বিতভাবে হাঁপানির চিকিৎসা হলো
অ্যালার্জেন পরিহার : হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো যে জিনিসে অ্যালার্জি তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই হাঁপানি রোগীর প্রথমেই অ্যালার্জি পরীক্ষা করে জানা দরকার তার কিসে কিসে অ্যালার্জি হয়।
ওষুধ প্রয়োগ : নানা ধরনের হাঁপানির ওষুধ আছে। প্রয়োজন মতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন।
অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও হাঁপানি রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করে। এটাই হাঁপানি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারণা ছিল, হাঁপানি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথমদিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগের মাইট প্রুফ কভার, ফিল্টার মাক্স, ভ্যাকসিনসহ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেই হচ্ছে।
লেখক :
সাবেক অধ্যাপক, অ্যালার্জি বিভাগ
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার
"