অধ্যাপক (ডা.) মো. সাইফুল সলাম

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

যাদের প্রয়োজন কৃত্রিম চোখ

মানুষের চোখে প্রতিফলিত হয় ব্যক্তিত্ব, দুঃখ-কষ্ট আরো কত কী। মানুষের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশজুড়েই রয়েছে এ চোখ। এ মূল্যবান চোখ যদি কোনো আঘাত, দুর্ঘটনা বা জটিল কোনো রোগের জন্য হারাতে হয়, তবে মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। চোখ না থাকার কারণে হীনম্মন্যতায় ভুগে রোগী ছেড়ে দেয় লেখাপড়া, খেলাধুলা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামাজিক কাজকর্ম।

সবার মাঝে নিজেকে খুব একা ও নিঃসঙ্গ ভাবতে থাকে। তাই অনেকে কালো চশমা পরে সবার মাঝ থেকে আড়াল করে রাখেতে চায় নিজেকে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে আমাদের মধ্যে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে একটি কাস্টম মেইড কৃত্রিম চোখ। এ কৃত্রিম চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই; কিন্তু এ চোখ রোগীর হতাশা, কষ্ট আর নিঃসঙ্গতাকে মুছে দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে হারানো সৌন্দর্য ও একটি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন।

তাই একটি সুন্দর ও ব্যক্তিত্বময় জীবনের কামনায় বাংলাদেশে এখন সর্বাধুনিক কাস্টম মেইড কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন করা হয়।

যে কারণে কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন

সময়মতো সঠিক মাপের কৃত্রিম চোখ ব্যবহার না করার ফলে চক্ষুকোটর চারপাশের মাংসপেশি দ্বারা সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে সঠিক মাপের কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপনের জন্য তা আনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই চোখ হারানোর সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সঠিক মাপের ও রঙের আসল চেখের মতো দেখতে (অন্য কেউ বুঝতে পারবে না এমন) একটি কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন করা উচিত।

সর্বসাধারণের কথা চিন্তা করে রেডিমেড কৃত্রিম চোখ বা পাথরের চোখ তৈরি করা হয়। কিন্তু তা বিভিন্ন রোগীর চক্ষুকোটরের মাপমতো হয় না এবং কৃত্রিম চোখটি ছোট-বড় হয়ে যায়, যা প্রতিস্থাপন করলে কৃত্রিমই মনে হয়। কিন্তু একটি কাস্টম মেইড কৃত্রিম চোখ রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে তৈরি হয়, ফলে তা পাশের চোখের সমান, স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে সক্ষম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।

প্রতিটি ব্যক্তির আইরিশ বা চোখের মণির রঙ এবং সাইজ ভিন্ন, যা রেডিমেড কৃত্রিম চোখে হয় না। কিন্তু কাস্টম মেইড কৃত্রিম চোখ ব্যক্তির আসল চোখের মণির রঙ ও সাইজ সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে তৈরি করা হয়। কাস্টম মেইড কৃত্রিম চোখের স্কে¬রা বা সাদা অংশের রঙ পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়, যা ব্যক্তিবিশেষ সাদা, নীলাভ সাদা, লালাভ সাদা, বাদামি বা হলুদাভ হয়ে থাকে। রেডিমেড কৃত্রিম চোখ সাধারণত সাদাই হয়।

কাস্টম মেড কৃত্রিম চোখে ক্যাপেলারি বা রক্তজালিকা বিন্যাস পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিস্থাপন করা হয়, যা রেডিমেড চোখে পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন বিষয়ে যেসব চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো :

কাস্টম মেড অকিউলার প্রোসথেসিস কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন : বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক মানের যে কৃত্রিম চোখ পাওয়া যায়, তা শুধু নির্দিষ্ট রোগীর চক্ষুকোঠরের মাপ নিয়ে আসল চোখের সমান, একই রঙের ও সাইজের আইরিশ বা চোখেল মণি, রক্তজালিকা বিন্যাসসহ স্কে¬রা বা চোখের সাদা অংশের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়। এটা স্বভাবিক, নড়াচড়া করতে সক্ষম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। জার্মানি অ্যাক্রিলিক ফাইবার দ্বারা তৈরি বলে এটি হালকা ও উন্নতমানের।

অরবিটাল প্রোসথেসিস (কৃত্রিম চোখ, চোখের পাতা, পাপড়ি প্রতিস্থাপন) : দুর্ঘটনা বা ক্যান্সারের জন্য চোখ, চোখের পাতা, পাপড়ি, ভ্রূ অপারেশন (এক্সেনটারেশন) করে ফেলে দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে রোগীর ত্বকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে (সিলিকন বেজড) চোখ, চোখের পাতা, পাপড়ি ও ভ্রূ প্রতিস্থাপন করা হয়।

রেলিনেবল চিলড্রেন অকিউলার প্রোসথেসিস : শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চক্ষুকোটরও বড় হয়। তাই শিশুদের কৃত্রিম চোখ এমনভাবে তৈরি, যা ক্রমবর্ধমান চক্ষুকোটরের মাপমতে নতুন চোখ না বানিয়ে বৃদ্ধি করা যায় বছরান্তে।

লেখক :

কৃত্রিম চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান

ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close