ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান
চোখের ওষুধে সতর্ক হোন
আমাদের শরীরের অঙ্গগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো চোখ। তাই চোখে কোনো ওষুধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। অন্যদিকে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অনিয়মতান্ত্রিক ওষুধ ব্যবহার চোখের অন্ধত্বের কারণ হতে পারে?
কীভাবে সতর্ক হবেন
প্রথমত. রোগীকে জানতে হবে তার কি চোখের কোনো ড্রপে অ্যালার্জি আছে কি না? আগের অ্যালার্জির ইতিহাস থেকে সেই ড্রপের নাম ডাক্তারকে চিকিৎসা নেয়ার আগেই জানানো প্রয়োজন।
শরীরে চোখের রোগ ব্যতীত অন্য কোনো রোগ আছে কি না (যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানি, বাতরোগ ইত্যাদি) তা ডাক্তারকে জানানো প্রয়োজন।
চোখের চুলকানি বা অ্যালার্জির চিকিৎসা হিসেবে কখনো কখনো ডাক্তার স্বল্প সময়ের জন্য স্টেরয়েড আইড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন এবং রোগী অনেক আরামবোধ করেন। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত রোগী এ ড্রপ মাসের পর মাস ব্যবহারের ফলে চোখে ছানিরোগ এবং চাপ বেড়ে গিয়ে (গ্লুকোমা) চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহারজনিত অন্ধত্বের হার দিন দিন বাড়ছে।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই চোখে সমস্যা হলে ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ কিনে চোখে ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। এতে চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন কমে যায় এবং ঘন ঘন চোখে ইনফেকশন হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ওষুধ প্রয়োগেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
যারা গ্লুকোমা রোগের জন্য চোখের ড্রপ ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা আবশ্যক। কারণ বিটাব্লকার জাতীয় চোখের ড্রপ যেমন টিমোলোল মেলিয়েট হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগীদেরও অনেক মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাঁপানি, হৃদরোগীদের গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসায় অন্য গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার প্রয়োজন। এ ছাড়া ওষুধ প্রয়োগের পর নেত্রনালিতে কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে রাখলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকাংশে কম হয়।
যাদের এঙ্গেলক্লোজার গ্লুকোমা রয়েছে, কোনো কারণে তাদের চোখে যদি হোমাট্টপিন বা অ্যাট্টপিন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে চোখে পন্ড ব্যথা হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
যাদের চোখের ভেতর প্রদাহ বা ইউভাইটিস রয়েছে, সে ক্ষেত্রে পাইলোকারপিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায় না। এতে চোখের প্রদাহ বেড়ে যায়।
আঘাতের কারণে অথবা অন্য যে কোনো কারণে যদি কর্নিয়ায় ঘা হয়, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করলে কর্নিয়া ঘা বেড়ে গিয়ে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। এতে চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়াও শুষ্ক চোখ, কর্নিয়ার এব্রাশন, ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রোগে স্টেরয়েড ব্যবহার করা ঠিক নয়।
তাই আর ইচ্ছামতো চোখের ওষুধ ব্যবহার নয়। চোখের ওষুধ ব্যবহারে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক :
চক্ষুবিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম
"