ডা. দিদারুল আহসান

  ১১ এপ্রিল, ২০১৯

প্রতিদিনের কাজকর্ম থেকেও হয় চর্মরোগ

আমরা প্রতিদিনের জীবনযাপনে সাধারণত অনেক কিছুই ব্যবহার করি। যেমন আপনি হাতে একটি ঘড়ি পরেছেন কিংবা একটি আংটি ব্যবহার করছেন। এ ঘড়ি বা আংটি ব্যবহার করার ফলে আপনার শরীরের সেই অংশটিতে যদি বিকৃতি দেখা দেয় বা এমন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, যা আপনার শরীরের ওই অংশে কখনো ছিল না, তবে সেটাই হলো ঈড়হঃধপঃ ফবৎসধঃরঃরং বা স্পর্শজনিত চর্মরোগ। আরো একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মনে করুন, আপনার কোমরে ব্যথা হয়েছে, আপনি ব্যথা কমানোর জন্য একটি মালিশ বা জেল ব্যবহার করলেন। করার পর যদি স্থানটি লাল হয়ে যায়, জ্বলে বা চুলকায় এবং ব্যথা করে কিংবা ফোসকা ওঠে, তাহলে ধরে নিতে হবে এটি একটি সংস্পর্শজনিত চর্মরোগ অর্থাৎ ওই মলম আপনার ত্বকের সংস্পর্শে আসার জন্য এ ধরনের হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চুলের কলপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে। চুল কালো করার জন্য কলপ ব্যবহার করা হয় এবং সেই কলপ যখন চুল পেরিয়ে মাথার ত্বকে লাগে, তখন মাথার ত্বক চুলকাতে পারে অথবা নাক, মুখ পর্যন্ত ফুলে গিয়ে এক বীভৎস অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থাকে সংস্পর্শজনিত ডার্মাটাইটিস বলা হয়ে থাকে। একে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক. প্রাইমারি ইরিট্যান্ট ডার্মাটাইটিস। এ ক্ষেত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো শরীরে কোনো ধরনের অ্যালার্জি সৃষ্টি করে না। প্রদাহী পদার্থের রাসায়নিক প্রভাবে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি হয়। খ. অ্যালার্জির কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। এ ক্ষেত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থ সরাসরি দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। প্রথমটির কারণ নিম্নরূপ এবং এটি শিশুর ক্ষেত্রে বেশি হয়। কারণ শিশুর ত্বক খুব পাতলা। ফলে যেকোনো উত্তেজক পদার্থের সামান্য স্পর্শেই এ রোগ দেখা দেয়। ক্ষার একটি অন্যতম কারণ। ব্লিচিং পাউডার, ডিটারজেন্ট, সাবান, বাসনপত্র পরিষ্কার করার জিনিসপত্রে ক্ষার থাকে এবং এ ক্ষার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের কোষকে নষ্ট করে এ রোগের সৃষ্টি করে। এর বাইরে আগাছা, কীটনাশক, লোহা, ইস্পাত, লুব্রিকেটিং তেল দিয়ে এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে কড়া সাবান, ডিটারজেন্ট, ব্লিচিং পাউডার, অ্যাসিড, ক্ষার, থুতু, প্রস্রাব এমনকি পায়খানা লেগেও রোগ হতে পারে। অ্যালার্জির কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস সাধারণত বড়দের বেশি হয়। কারণ এ ধরনের অ্যালার্জির জন্য শরীরে যেসব কোষ প্রয়োজন, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর শরীরে তা থাকে না।

আসুন জেনে নিই শরীরের কোন স্থানে কী দিয়ে এ চর্মরোগ হতে পারেÑ

মুখ : প্রসাধনী, চুলের কলপ, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদি।

কান : কানের দুল বা গহনা, বিশেষ করে তা যদি নিকেলের হয়।

চোখের পাতা : প্রসাধনী বস্তু, যা কিনা চোখের পাতায় ব্যবহার করা হয়।

ঠোঁট : লিপস্টিক ও ধাতুর তৈরি চশমার ফ্রেম।

গলা : পশম জাতীয় জামাকাপড়, সুগন্ধি পদার্থ এবং নকল গলার হার।

বগল : ঘামের গন্ধ নিবারক পদার্থ, স্প্রেযুক্ত প্রসাধনী, জামা ইত্যাদি।

স্তন : ইলাস্টিক অথবা ব্রেসিয়ার।

কোমর : ইলাস্টিক।

কব্জি : ঘড়ি ও চুড়ির নিকেল অংশ।

হাত : হাতের গ্লাবস, সাবান, ডিটারজেন্ট।

পা : জুতা, মোজা।

চিকিৎসা : যে পদার্থের সংস্পর্শে এসে ত্বকের এ প্রদাহ-বিকৃতি বা উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়, সেই পদার্থ থেকে ত্বকের সংস্পর্শ দূর করতে হবে। এর বাইরে প্রয়োজনমতো Steroid I Antihistamin ব্যবহার করতে হবে।

লেখক :

চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ

আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close