মিজানুর রহমান কল্লোল

  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

গাউট বা গেঁটেবাত

গাউটকে সাধারণ বাংলায় গেঁটেবাত বলা হয়। বাত রোগের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ধরনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সব বাতব্যথার মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ ব্যথার কারণ হলো গাউটজনিত বাতব্যথা। প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৮৪০ জন গাউট রোগে ভোগেন। শিশু ও অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি তেমন একটা দেখা যায় না। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, বিশেষ করে যাদের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তারা মহিলাদের চেয়ে গাউট রোগে বেশি আক্রান্ত হন। মেনোপজের আগে মহিলারা কদাচিৎ আক্রান্ত হন। যেসব লোকের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের গাউট রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

পরীক্ষা

সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিক এসিডের মাত্রা দেখে গাউটের ধরন ও তীব্রতা বোঝা যায়। সাধারণভাবে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো শতকরা ২ থেকে ৬ মিলিগ্রাম। ৬ মিলিগ্রামের ওপরে গেলে গাউট সন্দেহ করতে হবে এবং তখনই চিকিৎসা করাতে হবে।

ইএসআর এবং শ্বেতকণিকার সামগ্রিক গণনা বেড়ে যাবে। আক্রান্ত অস্থিসন্ধি থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করলে ক্রিস্টাল বা দানা ধরা পড়বে। এক্সরে করলে দীর্ঘস্থায়ী গাউটের ক্ষেত্রে হাড়ে ও অস্থিসন্ধিতে বিশেষ ধরনের ক্ষয় ও অন্য আনুষঙ্গিক পরিবর্তন দেখা দেবে।

গাউটের বিশেষত্ব হলো

- রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে।

- প্রথম উপসর্গের মতো বারবার একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।

- অস্থিসন্ধিতে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল জমা হয়।

- দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি ক্ষয় হয়। কিডনির কার্যকারিতা লোপ পায় এবং কিউসিতে ইউরিক এসিড পাথর তৈরি হয়।

গাউটের ক্ষেত্রে কিছু কথা মনে রাখতে হবে। যেমনÑ

-কোনো অস্থিসন্ধিতে সামান্য আঘাতের পর যদি অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হয়। সেটিকে গাউট ভাবতে হবে।

- স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পরিবর্তনে বা কোনো ওষুধ গ্রহণে যদি বাতের উপসর্গের সৃষ্টি হয়, সেটিকে গাউট ভাবতে হবে।

- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে, না হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা

প্রথমেই আক্রান্ত স্থানকে বিশ্রামে রাখতে হবে।

ব্যথা ও প্রদাহের জন্য এনএসএ আইডি গ্রহণ করা যেতে পারে। এদের মধ্যে ইনডোমেথাসিন বেশ কার্যকর। গাউটের চিকিৎসায় একসময় কোলচিসিন খুব বেশি ব্যবহৃত হলেও দেখা গেছে তা কম কার্যকর এবং এটি ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব ও বমি ঘটাতে পারে। অস্থিসন্ধি ফুলে গেলে সিরিঞ্জ দিয়ে রস টেনে বের করার প্রয়োজন হতে পারে এবং অস্থিসন্ধিতে কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।

গাউটের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য অনেক ওষুধ থাকলেও অ্যালুপিউরিনল ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি ইউরিক এসিডের মাত্রানুযায়ী দিতে হয়। এ ছাড়া রক্তের ইউরিক এসিড কমানোর জন্য ইউরিকোস ইউরিক ড্রাগ যেমন প্রোবেনাসিড বা সালফিপাইরাজোন ব্যবহার করা যেতে পারে। কখনোই টাইট জুতা পরবেন না। সতর্ক থাকবেন যাতে হাত-পায়ে কোনো আঘাত না লাগে। কারণ আঘাত লাগলে রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। এ ছাড়া খাদ্যের ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। গাউটের সমস্যা বেশি হলে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক :

হাড়জোড়া ও আঘাতজনিত রোগ বিশেষজ্ঞ

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close