ডা. মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৯

হার্ট অ্যাটাক হলে যা করতে হবে

হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়। এগুলো হলো-

ক. পর্যায়ক্রমে দৈনন্দিন কাজ শুরু করা

খ. পরবর্তী হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ

গ. হার্ট অ্যাটাক-পরবর্তী পুনর্বাসন

হার্ট অ্যাটাক-পরবর্তী করণীয়

* হার্ট অ্যাটাক হওয়ার দিন (প্রথম ২৪ ঘণ্টা) : বিছানায় পূর্ণ বিশ্রাম নেবেন। এ সময় তরল খাবারÑ দুধ, হরলিকস, স্যুপ ইত্যাদি খাবেন। পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য বেডপ্যান ব্যবহার করবেন।

* দ্বিতীয় দিন (২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা) : এক বা দুবার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট বিছানার পাশে চেয়ারে বসবেন। এ সময় গরম খাবার- জাউ, ভাত, ফিরনি, সেমাই ইত্যাদি খাবেন। এদিন বিছানার পাশে কমোড ব্যবহার করতে পারেন।

* তৃতীয় দিন (৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা) : ওয়ার্ডের ভেতর হাঁটবেন এবং হেঁটে টয়লেটে যাবেন। এ সময় স্বাভাবিক শক্ত খাবার শুরু করবেন।

* চতুর্থ দিন (৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা) : একই তলায় ধীরে ধীরে হাঁটার দূরত্ব বাড়াবেন।

* পঞ্চম দিন (৯৬ থেকে ১২০ ঘণ্টা) : সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করবেন।

* ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে রোগী নিজ বাসস্থানে ফিরে যাবেন।

* ৭ থেকে ১৪ দিন : বাড়ির উঠানে বা বাগানে হাঁটবেন।

* ১৪ থেকে ২৮ দিন : ধীর ধীরে হাঁটার দূরত্ব ও সময় বাড়িয়ে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ মিনিট করতে হবে।

* ২৮তম দিনে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করবেন এবং ইটিটি করবেন।

* কাজের ধরন অনুযায়ী ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ পর কর্মক্ষেত্রে যোগদান করবেন।

* ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা করতে পারবেন।

* পরবর্তী হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়

* বেশি ক্যালরি-সমৃদ্ধ খাদ্য বর্জন।

* মদ্যপান, সাদা জর্দা, ধূমপান বন্ধ করতে হবে (ধূমপান ছাড়ার ১০ বছর পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়)।

* অতিরিক্ত চা, কফি, ফাস্টফুড, টিনজাত ও শুকনো খাবার, কোমলপানীয় বর্জন করতে হবে।

* মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম কম করাও হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ রোগ বংশগতও হয়।

* অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, শোক, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধপ্রবণতা, হিংসা-বিদ্বেষ, অশান্তি, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় বা চেঁচামেচি (চিৎকার), অস্থিরতা, ক্ষমা করতে না পারা- এসব মানসিক চাপ বর্জনীয়।

* উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পরও তা নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত রাখা (সপ্তাহে একদিন রক্তচাপ পরীক্ষা, মাসে একবার রক্তের সুগার দেখা, ৩ মাস পরপর লিপিড প্রোফাইল ও ৬ মাস পরপর ইসিজি এবং বছরে একবার করে ইটিটি করা উচিত)।

* রক্তের লিপিড প্রোফাইলে সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খাবেন।

* ইকোকার্ডিওগ্রাম ডপলার এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে (রিস্ক ফ্যাক্টর ও বুকে ব্যথা থাকলে হৃদরোগজনিত) এনজিওগ্রাম করতে পারেন (অনেকের হৃৎপিন্ডে ব্লক ধরা পড়ে)।

* প্রতিদিন ৩০ মিনিট মুক্ত বাতাসে ব্যায়াম বা দ্রুত হাঁটা (সহনীয়), খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বাগান করা এবং সুযোগ পেলেই হাঁটা হৃদরোগ প্রতিরোধক, মাদকাসক্তি হৃৎপিন্ডের শত্রু।

* প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি, তরকারি, আদা, মেথি, করলা, রসুন, টক ফল খাবেন, লবণ ও চিনি কম খাবেন, টক দই খাবেন।

* দাম্পত্য সুখী সম্পর্ক, সামাজিক সুস্থ সম্পর্ক, ধর্ম-কর্ম, ধ্যান, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

লেখক :

বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ

এমএইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close