ডা. মুনতাসীর মারুফ

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

বিছানায় প্রস্রাব করে যে শিশু

প্রস্রাবের বেগ হলে কোথায় যেতে হবে তা সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর বয়সেই শিশুরা শিখে ফেলে। অনেকের তা শিখতে দেরী হতে পারে। অনেকেই দিনে সঠিক স্থানে প্রস্রাব করলেও রাতে ঘুমের মাঝে বিছানা ভেজায়। বয়সের সাথে সাথে অধিকাংশেরই এ সমস্যা দূর হয়ে যায়। তবে, ৫-৬ বছর বয়সের পরও রাতে বিছানা ভেজালে অথবা সঠিক স্থানে নিয়মিত প্রস্রাব করা এবং অনেক দিন বিছানা না ভেজানোর পর হঠাৎ নতুন করে এ সমস্যা শুরু হলে একে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রস্রাবের ইনফেকশন, ডায়াবেটিস, মৃগীরোগ প্রভৃতি শারীরিক রোগের কারণে শিশু বিছানা ভেজাতে পারে। এছাড়া মানসিক কারণেও শিশুদের এ প্রবণতা হতে পারে। গবেষকদের মতে, যেসব শিশু রাতে বিছানা ভেজায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা কোন মানসিক দ্বন্দ্ব বা চাপে ভোগে, যা হয়তো তারা মৌখিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। স্কুলে ভর্তি, বাসা পরিবর্তন, মা-বাবার বিবাহ-বিচ্ছেদ বা মৃত্যু, নতুন ভাই বা বোনের জন্ম প্রভৃতি শিশুর জন্য দ্বন্দ্ব বা চাপের কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুল পড়ুয়া শিশুদের ২ থেকে ৫ শতাংশ মানসিক কারণে বিছানা ভেজায়। একে ‘ইনিউরেসিস’ রোগ বলা হয়।

রোগাক্রান্ত শিশু বিছানা ভেজানোর কারণে নিজেও লজ্জা ও গ্লানি বোধ করে। বিছানা ভেজানোর জন্য বকুনি দিলে বা মারধর করলে তা আরো বাড়ে। তা না করে বরং, বিছানা ভেজালে যাতে তা দ্রুত এবং সহজে পরিবর্তন করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন, বিছানার তোষকের উপর প্লাস্টিক বা রাবার ক্লথ রাখা যেতে পারে। যাদের এ সমস্যা আছে, তাদের রাতে ঘুমের আগে বেশী পানি খাওয়ানো ঠিক হবে না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে বাথরুমে প্রস্রাব করাতে হবে। প্রতি রাতে কোন নির্দিষ্ট সময়ে বিছানা ভেজালে ঐ সময়ের আগে আগে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বাথরুমে নিয়ে প্রস্রাব করাতে হবে। বিশেষ ধরণের অ্যালার্ম (ইনিউরেসিস অ্যালার্ম) ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে বিছানা না ভেজালে পরদিন সে কারণে তাকে প্রশংসা বা প্রিয় কোন জিনিস দিয়ে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। শিশুর মানসিক দ্বন্দ্ব বা চাপের ব্যাপারটি বোঝার এবং তা সমাধানের জন্য তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছুদিনের জন্য ওষুধ সেবন করানো যেতে পারে।

লেখক : মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close