ডা. মহসীন কবির লিমন

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

শ্বাসনালির প্রদাহ

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত প্রায় সব ঋতুতেই শ্বাসনালিতে সমস্যা দেখা যায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসনালিতে প্রদাহ একটি সাধারণ সমস্যা। শিশু ও বয়স্করাই সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শ্বাসনালি ও তার শাখা-প্রশাখার ছোট ছোট ঝিল্লি বা শ্বাসনালির জালের মতো অংশ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণেই সাধারণত এ রোগ বা প্রদাহ অনুভূত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্বাসনালির প্রদাহ রোগটি সাধারণ সর্দি লাগার ফলেই হয়ে যায়। সর্দি কণ্ঠনালি থেকে নিচের দিকে প্রসারিত হয়ে বায়ুনালিগুলোকে আক্রমণ করলেই আমরা শ্বাসনালিতে এ প্রদাহ রোগে আক্রান্ত হই। পরিবেশের আবহাওয়া পরিবর্তন ও বায়ু দূষণই সাধারণত এ রোগের মূল কারণ। এ ছাড়াও যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যারা অপুষ্টিতে ভোগে সেইসঙ্গে পুষ্টিকর খাবার হতে বঞ্চিত হয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয় তাদের এ রোগ আক্রমণ করে থাকে। এ ছাড়াও শরীরে অত্যধিক পানি, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল অথবা শরীরে ঠাণ্ডা হাওয়া লাগান, কণ্ঠনালিতে অতিরিক্ত প্রেসার যেমন- গান গাওয়া, বক্তৃতা দেওয়ার পর ঠাণ্ডাজাতীয় পানীয়, আইসক্রিম খাওয়া ইত্যাদি এবং ধুলাবালিযুক্ত বাতাসে ভ্রমণও এ রোগে আক্রান্তের অন্যতম কারণ। রোগের প্রথম অবস্থায় শুষ্ক খুসখুসে কাশি, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা, বুকব্যথা, কথা বলতে কষ্ট হওয়া ও দেহের তাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া- এসব লক্ষণ দেখা যায়। মাঝে মাঝে হালকা জ্বরও অনুভূত হয়। রোগীর শুষ্ক কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সামান্য কষ্ট থাকে, বায়ুনালিগুলো বেশি আক্রান্ত হলে রোগী বুকের মধ্যে যন্ত্রণা ও টানটানভাব অনুভব করে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা বেড়ে যায়। ক্রমেই কফ তৈরি হতে থাকে এবং অল্প কাশিতেই থোকা থোকা কফ বের হতে থাকে। সাধারণত সুস্থ, সবল মধ্যবয়সীদের জন্য হঠাৎ শ্বাসনালির প্রদাহ কখনোই মারাত্মক রোগ নয়। কিন্তু শিশু, বৃদ্ধ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে এ রোগে বিপদের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে ভালো না হলে এ রোগ ধীরে ধীরে পুরনো ও জটিল আকার ধারণ করে, তখন একে পুরনো বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসনালির প্রদাহ রোগ বলে। প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে জ্বর থাকলে রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হঠাৎই শ্বাসনালির প্রদাহ হলে তা কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়, আবার কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এ রোগ কিছুতেই ভালো হয় না এবং ক্রমেই এর সঙ্গে নতুন নতুন উপসর্গ যোগ হতে থাকে। বুকে অত্যধিক ব্যথা থাকলে সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ নিতে হবে। সাধারণত পেনিসিলিন জাতীয় জীবাণু ধ্বংসকারী ওষুধ দেয়া হয়। রোগ প্রবল হলে এমপিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, কোট্রাইম অক্সাজল জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এ ওষুধগুলো সাধারণত ৭-১০ দিন পর্যন্ত খেতে হয়। কাশি ও কফের জন্য বেঞ্জিন বা মেথানলের জলীয়বাষ্প শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে দিনে তিনবার করে ১০ মিনিট ধরে নিলে খুব উপকার পাওয়া যায়। শ্বাসনালির সংকীর্ণতার ফলে শ্বাসকষ্ট হলে সালবিউটামল, ইফিড্রিন জাতীয় উপশমকারী ওষুধ দেওয়া হয়। রাতে কাশি বন্ধ করার জন্য ফোলকোডিনযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করা যায়। আর এসব ওষুধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো খেতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close