ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

উচ্চরক্তচাপ

দেহের রক্ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকেই রক্তচাপ বলে। বিভিন্ন বয়সে ও বিভিন্ন মানুষ ভেদে শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন হয়। আবার একই মানুষের ক্ষেত্রে দিনের বিভিন্ন সময় এ রক্তচাপও বিভিন্ন রকম হতে পারে। উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, পরিশ্রম, রাগ, ক্রোধের কারণে ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুমালে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তচাপের এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যদি কোনো ব্যক্তির রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং বেশির ভাগ সময় এমনকি বিশ্রামের সময়ও যদি বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে তিনি উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের রোগী। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রতিদিন ব্লাডপ্রেসার চেকআপের মাধ্যমে রক্তচাপের মাত্রা নির্ণয় করতে হবে ও অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত ব্যক্তি যেকোনো সময় ভয়ংকর পরিণতিতে পড়তে পারেন। অনেক সময় উচ্চরক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। নীরবে উচ্চরক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই উচ্চরক্তচাপকে নীরব ঘাতকও বলা যেতে পারে। উচ্চরক্তচাপকে কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ যেমন- হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ যেকোনো সময় গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উচ্চরক্তচাপের কারণে হার্টের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায় ও হার্ট স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হার্ট দুর্বল হওয়ায় রক্ত ঠিকমতো পাম্প করতে পারে না, তখনই হার্টফেইলরের মতো মারাত্মক পরিণতি হয়। এ ছাড়াও হার্টের রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাক বা ইনফ্রাকশনও হতে পারে। উচ্চরক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক হতে পারে। এসব রোগের শেষ পরিণতি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চোখের ক্ষেত্রে রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী অন্ধও হয়ে যেতে পারে এ উচ্চরক্তচাপের কারণে। শরীরে উচ্চরক্তচাপের মূল কারণগুলো হলোÑ বংশগত, ধূমপান, খাবারে অতিরিক্ত লবণ, অধিক ওজন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত মদপান, অতিরিক্ত টেনশন ও শরীরে অন্য কোনো রোগের কারণে যেমন ডায়াবেটিস ইত্যাদি। উচ্চরক্তচাপ কমাতে বা প্রতিরোধে জীবনযাপন, খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত ঘুম, দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান বর্জন, পান-গুল-জর্দা বর্জন, মদপানের অভ্যাস পরিহার করাসহ প্রতিদিন কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে। এ ছাড়াও যাদের উচ্চরক্তচাপ কোনো অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রিত হয় না, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপের কারণ জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত রোগীরা জানতেও পারেন না যে তারা এ সমস্যায় ভুগছেন। তাই মাঝে-মধ্যেই ব্লাডপ্রেসার চেকআপ করাতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close