ডা. মোহিত কামাল

  ০৩ জুলাই, ২০১৮

মাদকাসক্তি

মাদকাসক্তির লক্ষণ : সাধারণত যারা মাদকসেবী তাদের চিন্তা ও আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা যায়। মাদকসেবীদের চিন্তাভাবনা হয় বিক্ষিপ্ত, কোনো কিছুতে বেশিক্ষণ মনোসংযোগ করতে পারে না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে শান্ত সুবোধ ছেলে বা মেয়েটি হঠাৎই পরিবারের অবাধ্য হয়ে ওঠে। মাদকসেবীদের জীবনযাত্রা একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, তারা কম ঘুমাচ্ছে, সারা রাত জেগে থাকে আর পরদিন দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঘুমায়। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, খিদে কমে যাওয়া, বমিভাব দেখা দেওয়া। মাদকসেবীরা কারণে-অকারণে মিথ্যা কথা বলে। তারা প্রয়োজনের তুলনায় বাবা-মায়ের কাছে বারবার বেশি টাকা চায়, টাকা না পেলে রাগারাগি করে। এ ছাড়া মাদকসেবীদের নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, লেখাপড়ার ইচ্ছা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং চাকরির ক্ষেত্রেও তাদের বারবার সমস্যা হয়। মাদক গ্রহণের ফলে তাদের নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধব তৈরি হয় এবং পুরনোদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। ঘরের ভেতর মাদক গ্রহণের বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। বাসার জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন চুরি হতে থাকে। অনেক সময় বিনা কারণে খুব উৎফুল্ল বা বিষণœ ভাব দেখা যায় ও অসংলগ্ন কথা বলা বেড়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সব সময় ঝগড়াঝাঁটি লেগে থাকে, স্বাভাবিক যৌনজীবন ব্যাহত হয়। সব সময় উৎকণ্ঠা বা অহেতুক ভীতির মধ্যে থাকে।

মাদকাসক্তির চিকিৎসা : মাদকাসক্তির চিকিৎসার বেশ কটি ধাপ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়, মাদকাসক্তির ধরন নির্ণয় করা হয়। শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা করা হয়। এরপর তার ‘উইথড্রয়াল’ সিনড্রোম এবং মাদক প্রত্যাহারজনিত শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। শরীর থেকে মাদকের ক্ষতিকর রাসায়নিক অংশগুলো বের করে দেওয়া হয়, এ ধাপটিকে বলা হয় ‘ডিটক্সিফিকেশন’। এ সময় তার পুষ্টি নিশ্চিত করতে হয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়। মাদকমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্বীকৃত ওষুধ নির্দিষ্ট নিয়মে মনোচিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করা লাগতে পারে। পরবর্তী ধাপে তাকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদকমুক্ত থাকার প্রেরণা দেওয়া হয়। আবার যাতে মাদক গ্রহণ না করে সে বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া হয়, ফের আসক্ত হওয়ার জন্য যেসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ রয়েছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করা হয়, নানা সামাজিক কর্মকা-েও উৎসাহিত করা হয় চিকিৎসাধীন আসক্তজনকে। আসক্ত হওয়ার আগের যোগ্যতা ও গুণাবলি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুনর্বাসনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মাদকাসক্তি চিকিৎসার ধাপগুলো বেশ দীর্ঘমেয়াদি। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করাতে হয়। অপরিপূর্ণ চিকিৎসার কারণে আবার আসক্তি (রিল্যান্স) হতে পারে। ফ্যামিলি কাউন্সিলিংও চিকিৎসার একটি জরুরি ধাপ।

পরিবারের করণীয় : পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপানমুক্ত। সন্তানদের কার্যকলাপ এবং সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় সব সময় যাওয়া-আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে করে তারাই নিজে থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করে। পরিবারের সব সদস্যই ড্রাগের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন। ধৈর্য ধরে সন্তানদের সব কথা শোনার জন্য অভিভাবকরা নিজেদের প্রস্তুত করবেন। সন্তানদের মঙ্গলের জন্য পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট সময় দেবেন। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া-সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেওয়া যাবে না। পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, প্রায়ই তারা সবাই মিলে আনন্দদায়ক কিছু কার্যকলাপের পরিকল্পনা করবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটাবেন। ‘গুড প্যারেন্টিং’ বিষয়ে জ্ঞান নিতে হবে বাবা-মাকে।

লেখক : মনোচিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও কথাসাহিত্যিক, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist