ডা. এম এম সরদার
ধূমপান থেকে সাবধান হবেন
অপু তিন মাস হলো শপথ করেছে, সে আর ধূমপান করবে না। ৪০ বছরের তরুণ অপুর ২০টি বছর কেটেছে ধূমপানে। অপুর মতো রুমেল, শফি ও হিমেলের একই অবস্থা। এ ধূমপান তাদের জীবনে কত না যন্ত্রণা দিয়েছে। অপু নীরবে ভাবে, তার কতই-না পয়সা খরচ হয়েছে। তরুণ বয়সে হারাতে হয়েছে প্রেয়সীকে এবং একই সঙ্গে সামাজিক মর্যাদা। এ ছাড়া ঠা-া, কাশি, অ্যাজমাসহ শরীরে দখল নিয়েছে নানা রোগব্যাধি। ধূমপানজনিত গন্ধ তো মুখে লেগেই থাকত। অপু এখন বোঝে, সেই বন্ধুদের সঙ্গে ধূমপান আর চা পানে তার খরচ করতে হয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। অথচ সামান্য চাকরিজীবী বাবার টাকা কেন এভাবে সে নষ্ট করেছে। আজ বাবা নেই। শেষ বয়সে বাবা যখন পয়সার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান, তখন অপু অনেক কেঁদেছিল। এখন অপু উপলব্ধি করে, ধূমপানের কারণে কত রোগবালাই না তার শরীরে দখল নিয়েছে। যখন ঠা-া লাগে আর সেরে ওঠে না। অপু আরো জেনেছে, মরণব্যাধি ক্যানসারের অন্যতম কারণ ধূমপান। এ ধূমপান আজ পুরো সমাজকে গ্রাস করেছে। তাই এর প্রতিরোধে অপুকে এগিয়ে আসতে হবে; অন্যকে অনুৎসাহী করতে হবে।
অপু জেনেছে তামাক পাতা ও তামাক পাতার তৈরি দ্রব্য যেমন জর্দা, দোক্তা, কিমা ইত্যাদি সেবন ও ধূমপানের জন্য মুখ, কণ্ঠ, গলনালি, খাদ্যনালি ও ফুসফুসের ক্যানসার হয় এবং এর দ্বারা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি লক্ষ করা যায়। তামাক পাতা চিবানোর কারণে শুধু মুখের ক্যানসারই এ দেশে ২০ শতাংশ; পক্ষান্তরে যাদের এ অভ্যাস নেই, তাদের ১ থেকে ৩ শতাংশ, আর ফুসফুসের ক্যানসার ৮০ শতাংশ বেশি হয় ধূমপানের কারণে।
অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার ২০ গুণ বেশি। আর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। গবেষণা ও পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যারা নিয়মিত তামাক সেবন করেন, তাদের মধ্যে তামাকের বিষাক্ত নিকোটিন শরীরের রক্তে মিশে গিয়ে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অনেক কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া তামাক সেবনে অতিরিক্ত কাশির কারণে কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথাসহ স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপ হয়ে যায়। এ ছাড়া যৌনশক্তি কমে যায়। এ তামাকের কারণে মুখ, গলা ও শ্বাসযন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, যার ফলে ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ লক্ষ করা যায়। তাই চলুন অপুর মতো আজ থেকে ধূমপান ছেড়ে দেই এবং সুন্দর জীবন গড়ি।
লেখক : হোমিও চিকিৎসক ও ক্যানসার গবেষক
সরদার হোমিও হল, গ্রিন রোড, ঢাকা
"