ডা. মুনতাসীর মারুফ

  ২০ মে, ২০১৮

কীভাবে বুঝবেন অটিজম

অটিজম রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ল্যাবরেটরি পরীক্ষা নেই। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল, ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস-চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কীয় এ রকম আন্তর্জাতিক পাঠ্যবইয়ে অটিজম নির্ণয়ের জন্য গবেষণালব্ধ কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা আছে। সে অনুযায়ী উপসর্গ-লক্ষণ মিলিয়ে অটিজম রোগ নির্ণয় করা হয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বিকাশের তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এগুলো হচ্ছে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, যোগাযোগ, আচরণ ও আগ্রহ। অটিজমে আক্রান্ত সব শিশুই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নয়, তবে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুর বুদ্ধি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হয়। ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশের বুদ্ধিবৃত্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে।

একটি শিশুর বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় মা-বাবা, নিকটজন বা পরে অন্যদের সঙ্গে যেভাবে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে, অটিস্টিক শিশু তা করতে পারে না। অটিস্টিক শিশু সাধারণত বাবা-মা বা পরিচর্যাকারীর চোখে চোখ রেখে তাকায় না; মুখভঙ্গি বা শারীরিক অভিব্যক্তির মাধ্যমেও তার প্রতি অন্যদের সামাজিক আচরণের প্রত্যুত্তর দিতে পারে না; নিজের নাম বোঝার বয়সে এসব শিশুকে নাম ধরে ডাকা হলেও সাড়া দেয় না, এমনকি ফিরেও তাকায় না; সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে না; অন্য শিশুদের মধ্যে রাখা হলেও একপাশে সরে যায় অথবা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে কাউকে শারীরিক আঘাত করে বসে; আপনমনে থাকতে পছন্দ করে দেখে মনে হয়, সে যেন একাকী, আলাদা, নিজস্ব জগতে বাস করে, যে জগতের সঙ্গে অন্য কারো কোনো সম্পর্ক নেই; কোনো ধরনের আনন্দদায়ী বস্তু বা বিষয় সে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে জানে না; কেউ আদর করতে গেলে হয় নিস্পৃহ থাকে অথবা চিৎকার-কান্নাসহ অস্বাভাবিক আচরণ করে।

ভাষা অথবা অভিব্যক্তির মাধ্যমে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুদের দক্ষতার কমতি দেখা যেতে পারে। বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর ভাষাশিক্ষা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু ভাষা শিখতে ব্যর্থ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শব্দভান্ডার হয়তো ঠিকই থাকে, কিন্তু বাক্য শুরু করতে অস্বাভাবিক দেরি হয়, অথবা বাক্য শুরু করলেও কথা চালিয়ে যেতে পারে না বা যথাযথভাবে তা শেষ করতে পারে না। অনেকের সর্বনাম ব্যবহারে অসামঞ্জস্য দেখা যায়। অনেকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে অর্থবোধক বা নিরর্থক শব্দ বা বাক্যাংশ বারবার উচ্চারণ করে।

অনেক অটিস্টিক শিশু অহেতুক বা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে একই আচরণ বারবার করতে থাকে। যেমনÑমাথা সামনে-পেছনে দোলাতে বা হাততালি দিতে থাকে। অনেকে সবকিছু রুটিনমাফিক বা একই রকমভাবে করতে পছন্দ করে। এর ব্যত্যয় হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। আবার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বা অবস্থার পরিবর্তনও সে সহ্য করতে পারে না। ঘরের আসবাব যেভাবে ছিল, তার পরিবর্তনেও শিশু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়, চিৎকার করে বা কাঁদে। বিশেষ কোনো খেলনা বা বস্তু বা কাজের প্রতি এদের অতিরিক্ত মোহ দেখা যায়। অনেকে আবার খেলনার চেয়ে খেলনার নির্দিষ্ট কোনো অংশ নিয়েই মেতে থাকে। যেমন-খেলনা পুতুল নিয়ে পুতুলের মতো না খেলে এর একটি হাত নিয়েই কেবল নাড়াচাড়া করতে থাকে। অনেকে দোলনা বা রকিং চেয়ার বা একই স্থানে দাঁড়িয়ে ঘুরতে থাকা-এ জাতীয় পুনরাবৃত্তিমূলক খেলা পছন্দ করে।

এসব লক্ষণের যেকোনোটি সাময়িক সময়ের জন্য যেকোনো স্বাভাবিক শিশুর মধ্যেই দেখা দিতে পারে। তাই দু-একটি লক্ষণ দেখেই শিশুকে অটিস্টিক ভাবা ঠিক নয়। অথবা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অদক্ষতা, যোগাযোগে ব্যর্থতা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ ও আগ্রহ- এ তিন বিষয়ের যেকোনো একটি থাকা মানেই অটিজম নয়। এ তিন ক্ষেত্রের প্রতিটিরই কম-বেশি লক্ষণ দেখা দিলে তবেই শিশুটিকে অটিস্টিক বলে ভাবা যেতে পারে। তবে শিশু অটিজমে আক্রান্ত কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত দেবেন অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বই বা পত্রিকা পড়ে কিংবা ইন্টারনেট ঘেঁটে উপসর্গ মিলিয়ে ঘরে বসে শিশুকে অটিস্টিক ভেবে নেওয়া উচিত নয়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি

ওএসডি, স্বাস্থ্য অধিদফতর

ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist