ডা. দিদারুল আহসান
গনোরিয়া
এ রোগটি আমাদের দেশের অশিক্ষিত ও দরিদ্র সমাজে প্রমেহ নামে পরিচিত। আসলে এটি একটি জীবাণুবাহিত রোগ। Neisseria gonorrhea নামে জীবাণু দ্বারা রোগটি হয়ে থাকে। পৃথিবীজুড়ে এ রোগটির বিস্তৃতি যৌনরোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। Neisseria নামে এক চিকিৎসাবিজ্ঞানী এ রোগের জীবাণুটি আবিষ্কার করেন ১৮৭৯ সালে। এ রোগের জীবাণু ডিম্বাকৃতি বা শিমের বিচির মতো এবং এগুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে।
সুপ্তিকাল : রোগাক্রান্ত সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে দৈহিক মিলনের পর ৩ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ রোগের প্রকাশ ঘটে। রোগের আক্রমণস্থল পুরুষের ক্ষেত্রে মূত্রপথের সম্মুখ অংশে জীবাণু সংক্রমণ শুরু করে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তা প্রস্টেটগ্রন্থি এমনকি মূত্রথলি, উপান্ত বা শুক্রাশয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
উপসর্গ (পুরুষ) : পুরুষের যৌনাঙ্গ বিভিন্ন গ্রন্থি প্রস্টেটগ্রন্থি, শুক্রনালি, এপিডাইডাইমিস আক্রমণ করে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর দু-এক দিন পর প্রচুর পরিমাণ ঘন সাদা বা সামান্য হলদে রঙের পুঁজ পড়তে শুরু করে। প্রস্রাব করতে তীব্র জ্বালা অনুভূত হয়। পুরুষাঙ্গেও পুঁজজাতীয় পদার্থ লেগে থাকতে দেখা যায়। এ রোগে পুরুষাঙ্গে ও গায়ে কোনো রকম ঘা বা ক্ষত লক্ষ্য করা যায় না। হাত দিয়ে ধরলে হালকা ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুদিন পর রোগের উপসর্গ আরো কমে যায়। তার মানে কিন্তু রোগটি ভালো হওয়া নয় বরং রোগটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিকরূপ লাভ করে বলে ধরে নিতে হবে।
জটিলতা : শুক্রনালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, উপশুক্রাশয় (এপিডাইডাইমিস) নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে যৌনরসে বীর্যকোষ থাকে না, যার ফলে ওই ব্যক্তি সন্তানের বাবা হতে পারেন না। রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে যার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করবে সেই এ রোগে আক্রান্ত হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় প্রস্টেটগ্রন্থির প্রদাহ হতে পারে। ফলে প্রস্রাব আটকে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।
চিকিৎসা : চিকিৎসা শুধু রোগীর একার করলেই চলবে না। তার যৌনসঙ্গীরও করতে হবে। বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করা যায়, ইনজেকশন Ceftiaxone ২৫০ মিলিগ্রাম মাংসে, একই সঙ্গে ১০০ মিলিগ্রাম Doxicyline রোজ দুবার ৭ থেকে ১৫ দিন খেতে হবে।
পরামর্শ : দুই সপ্তাহ পর আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ৪ সপ্তাহ পর আবারও পরীক্ষা করে আরোগ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
লেখক : ত্বক ও যৌনব্যাধি বিশেষজ্ঞ
আল-রাজী হাসপাতাল
ফার্মগেট, ঢাকা
"