ডা. মুনতাসীর মারুফ

  ১৫ মার্চ, ২০১৮

আবেগজনিত রোগ বাইপোলার ডিজ-অর্ডার

শান্তশিষ্ট, লাজুক এবং কিছুটা কিপটে স্বভাবের কলেজছাত্র লিপনের (ছদ্মনাম) হঠাৎ পরিবর্তন দেখে আত্মীয়-বন্ধুরা তো অবাক! যে ছেলে বন্ধুদের আড্ডায় শ্রোতার ভূমিকাই পালন করত বেশি, সে হঠাৎ করে পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে যেচে কথা বলতে শুরু করল। আড্ডায় তার কথার যন্ত্রণায় অন্যরা বলারই সুযোগ পায় না। সবাইকে ডেকে ডেকে ক্যান্টিনে খাওয়াচ্ছে। মন চাইলেই কিনছে জামা-জুতো, দামি খাবার। রাতেও ঘুম নেই ছেলেটির। জোরে গান ছেড়ে ঘরময় পায়চারী। অথবা গভীর রাতেই বের হয়ে যায় বাড়ির বাইরে। বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়। এক সন্ধ্যায় চলে গেল স্থানীয় সংসদ সদস্যের অফিসে। গিয়েই হম্বিতম্বি। এখন থেকে সে-ই এলাকার এমপি, তাকে কেন অফিসে বসতে দেওয়া হচ্ছে না ইত্যাদি। তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি, মারধর। লোকজন তাকে ধরিয়ে দিল পুলিশে। পরবর্তীকালে মানসিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গেল, লিপন ভুগছে মানসিক রোগ বাইপোলার ডিজঅর্ডারে।

বাইপোলার ডিজঅর্ডার আবেগজনিত একটি মানসিক রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবেগের দুই ধরনের পর্যায় থাকে। একটি হচ্ছে ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়া। এ পর্যায়ে ব্যক্তি অস্বাভাবিক ফুর্তিবোধ করেন বা বিরক্ত থাকেন, কথা বলেন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বা কথায় স্থির থাকতে পারেন না। অতিরিক্ত খরচ বা দান-খয়রাত করেন। নিজেকে অনেক টাকার মালিক বা ক্ষমতাধর মনে করেন। কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে, যদিও সুষ্ঠুভাবে কোনো কাজ করতে পারেন না। ঘুমের প্রয়োজন তাদের কাছে কমে যায়। অনেকের যৌন আগ্রহ বাড়ে।

আক্রান্তরা নিজেদের রোগী বলে মানতে চান না। তাদের আচরণের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে অন্যদের চোখে। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আবেগের অন্য পর্যায়টি বিষণœতা বা ডিপ্রেশন। অনেকের ক্ষেত্রে শুধু ম্যানিয়া পর্যায়টিই দৃশ্যমান হয়, বিষণœতার পর্যায়টি বোঝা না-ও যেতে পারে। কারো ক্ষেত্রে সারাজীবনে হয়তো দু-একবার ম্যানিয়া পর্যায়টি দেখা দিতে পারে, কারো ক্ষেত্রে কয়েক বছর পরপর বা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এটি হতে পারে। অজ্ঞতার কারণে অনেকে একে জিন-পরীর আসর মনে করে ঝাড়ফুঁকসহ নানা অপচিকিৎসার দ্বারস্থ হন।

তবে এ রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আবেগের অবস্থাটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। রোগ তীব্র হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। মনে রাখতে হবে, ওষুধে রোগের উপসর্গ কমে গেলেও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। ওষুধ ছেড়ে দিলে রোগটি আবার দ্রুত ফিরে আসতে পারে।

লেখক : মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist