মো. আরিফুর রহমান ফাহিম
ভুল ওষুধ সেবনে...
ডাক্তারের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নেওয়ার পর এটা রোগীর দায়িত্ব ওষুধ সঠিকভাবে সেবন করা; কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ মানুষ ওষুধ সেবনে ভুল করে। ভুল ওষুধ সেবন মানুষ নিজে নিজেই করে অথবা বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের প্রভাবে হয়ে থাকে এবং আমেরিকায় ১৩১ জনে একজন ভুল ওষুধ সেবনে মারা যায়। আমেরিকার মতো উন্নত দেশে যদি এ অবস্থা হয় তাহলে আমরা খুব সহজেই অনুমান করতে পারি, আমাদের দেশের অবস্থা সম্পর্কে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে নিজেই নিজের চিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসা সম্পর্কে শিক্ষিতসমাজের মধ্যেও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। ২০০৭ সালে মো. সাইফুলের গবেষণার রিপোর্টে (ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব হেলথ) দেখা যায়, ৪৩ শতাংশ মানুষ নিজের পরিবারের সবার জন্য একই ওষুধ ব্যবহার করে। ৭৭ শতাংশ মানুষ সাধারণ ঠা-াজ্বর, অ্যালার্জি ও ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে ওষুধ বিক্রেতার পরামর্শ প্রাধান্য দেয়। ৭০ শতাংশের অধিক মানুষ ওটিসি ওষুধ সম্পর্কে জানে না এবং ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সব ওষুধ কেনা উচিত নয়। ৬৭ শতাংশ মানুষের ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আর যেসব ওষুধ লোকজন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কেনে তা হলো ক্লোরামফেনিকল, ওমোপ্রাজল, রেনিটিডিন, অ্যান্টাসিড, মেট্রোনিডাজল, ভিটামিন-সি ও মাল্টিভিটামিন। আমাদের দেশে ওষুধ সহজলভ্য হওয়ায় ও ফার্মেসির দোকানে ওষুধের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমরা ইচ্ছেমতো ওষুধ কিনি এবং জেনে বা না জেনে তা সেবন করি, এটা উচিত নয়। একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, এশিয়া অঞ্চলে ৪ মিলিয়ন মানুষ ভুল ওষুধ সেবন করে, যেখানে বাংলাদেশের সংখ্যা অর্ধমিলিয়নের বেশি। আমরা ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করার সময় কখনো কখনো ওষুধ খেতে ভুলে যাই। হঠাৎ করে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে বা ডোজ বিফল হয়ে গেলে শরীরে ওষুধের কার্যকর ঘনত্ব হ্রাস পায়, তাই ওষুধের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে। ডোজ বিফল হওয়ার ফলে রোগের উপসর্গ আবার দেখা দেয়, তাই ডোজ ভুলে গেলে কী করতে হবে তা আমাদের জানা উচিত। কিছু কিছু ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট, ডায়াবেটিকে ব্যবহৃত ইনসুলিন, মৃগী রোগের ওষুধ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধের ডোজ কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। অনেকে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে পরবর্তী একসঙ্গে দুটি ওষুধ খেয়ে ফেলে, যা উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে ওষুধ খেতে ভুলে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত দৈনিক একটি থেকে চারটি পর্যন্ত খাওয়া হয়, এ ক্ষেত্রে দিনে কবার খেতে হবে তার চেয়ে কত ঘণ্টা অন্তর অন্তর খেতে হবে, তা নির্ধারণ করে খাওয়া জরুরি। দিনে তিনবার খাওয়া মানে হলো প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর খাওয়া অথচ আমরা সময়ের চেয়ে খাওয়াটাকে প্রাধান্য বেশি দিই। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা আট ঘণ্টা অন্তর অন্তর খাবার খাই না, কিন্তু ওষুধ সেবনের জন্য ঘড়ি ধরে সময় নির্ধারণ করে খাওয়ার পর খাওয়া উচিত। যদি সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক না খাই তবে মানবদেহে রেজিস্টেন্স হওয়ার কারণে পরবর্তীকালে এ ওষুধটি অকার্যকর হয়ে পড়বে। তাই ডোজ ভুলে গেলে ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিন এবং ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করার সময় কখনো যেন ডোজ বিফলে না যায় সেদিকে বিশেষ সতর্ক থাকুন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
"