ডা. এম এম রহমান রাজীব
ডায়াবেটিস শনাক্তে এইচবিএওয়ানসি
মাজেদা বেগম ঢাকা এসেছেন ছেলের বাসায় ডাক্তার দেখাতে। ১২ বছর ধরে ডায়াবেটিস তার। ডাক্তারের কাছে গেলেই ডাক্তার যদি বকাঝকা করেন ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে নেই বলে! তাই তিনি বুদ্ধি করে আগের রাতে একটা ডায়াবেটিসের ওষুধ বেশি খেয়ে নিলেন-যাতে পরদিন সকালে ডায়াবেটিস কম আসে রক্তের রিপোর্টে। তার বুদ্ধি কাজেও লাগল, রক্তের রিপোর্টে ডায়াবেটিস কম এলো, কিন্তু ডাক্তার সাহেব আর একটা কী পরীক্ষা করলেন এবং বললেন, আপনার তো ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে নেই। তিন মাস আপনি ঠিকমতো ওষুধ খাননি। তাই শুনে মাজেদা বেগম হ্যাঁ হয়ে গেলেন। বললেন, জি সত্যি কথা। একটু ঝামেলায় ছিলাম, তাই ঠিকমতো ওষুধ খাওয়া হয়নি, কিন্তু আপনি কী করে বুঝলেন। ডাক্তার সাহেব বললেন, আমি জাদু জানি আর এই জাদু হলো এইচবিএওয়ানসি (HbA1c)। ডায়াবেটিস নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ণয় করা। এ জন্য একবার সকালে খালিপেটে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়, তারপর নাশতার ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। পরীক্ষাটি ঝামেলার হওয়ায় অনেকের মধ্যেই অনীহা দেখা যায়। অবশ্য রান্ডম টেস্টে এ ঝামেলা নেই। কিন্তু এসব পরীক্ষায় কেবল তাৎক্ষণিক অবস্থা জানা যায়। কারো রক্তে হয়তো এখন শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু কয়েক দিন আগে ছিল না। নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ হয়ে উঠতে পারে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, চোখের অসুখসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জন্য। এ কারণে ৪০ পেরোনোর পর ডায়াবেটিস হয়েছে কি না-সেটা দেখার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। তাই অনেক সময় বিগত দিনগুলোয় রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন কিনা সেটা জানা প্রয়োজন হয়। এইচবিএওয়ানসি (HbA1c) এমন একটি পরীক্ষা। বিগত তিন মাসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিল কি না-এ পরীক্ষার মাধ্যমে সেটি জানা যায়।
লেখক : ডায়াবেটোলজিস্ট ও ফিজিশিয়ান
খিলগাঁও ডায়াবেটিক ও স্পেশালাইজড ডক্টরস
"