ডা. মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

রিউম্যাটিক ফিভার

বাতজ্বর বা রিউম্যাটিক ফিভার ৫ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। বাতজ্বর থেকে পরবর্তীকালে জটিলতা হিসেবে হৃদরোগ, হৃৎপিন্ডের ভালভ নষ্ট হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। বাতজ্বর নির্ণয় নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। বিশেষ করে রক্তের এএসও টাইটারের মাত্রা নিয়ে এ বিভ্রান্তি বেশি। শিশুর গিঁটে ব্যথা হলে অনেক সময় বাতজ্বর হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এ ধরনের উপসর্গে শিশুর রক্তে ইএসআর, এএসও টাইটার পরীক্ষা করা হয়। এএসও টাইটার একটু বেশি পেলেই অনেক সময় বাতজ্বরের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়। এ দুটি পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে বাতজ্বরের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা শুরু করা সমীচীন নয়। এ রোগ নির্ণয়ের সময় কিছু জরুরি বিষয় চিকিৎসক ও অভিভাবক উভয়েরই মনে রাখা উচিত।

রিউম্যাটিক ফিভার নিয়ে যত রিউমার

তীব্র বাতজ্বর streptococcus pyogenesবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গলায় সংক্রমণের পর হয়। বাতজ্বরের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়ায় বিরুদ্ধ অ্যান্টিবডি উপাদান জড়িত। জেনেটিক কারণে কিছু ব্যক্তির নিজস্ব টিস্যু ব্যাকটেরিয়ার কাছে সহজে উন্মুক্ত হয়। এ ছাড়া অপুষ্টি ও দারিদ্র্য রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তার মানে শুধু এএসও টাইটার বেশি থাকলেই বিষয়টাকে বাতজ্বর বলা যাবে না। তেমনি রিপোর্ট স্বাভাবিক মানে যে বাতজ্বর নেই তাও বলা যায় না।

কখন বাতজ্বর হয়েছে বলা যাবে

বাতজ্বরের অনেক সুস্পষ্ট উপসর্গ ও লক্ষণ রয়েছে। যেগুলোর সমন্বয়ে রোগটি নির্ণয় করতে হয়। বিশেষ স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টনসিল বা গলার প্রদাহ হলে রক্তে Corticosteroids বাড়ে। যেকোনো টনসিলে দুর্বল সংক্রমণ হলেও এ পরীক্ষার রিপোর্ট অস্বাভাবিক বা বেশি আসতে পারে। বাতজ্বরে গলা, পিঠ, হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্ট আক্রান্ত হয় না। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে হৃৎপি-ে কোনো প্রদাহ হয় না।

বাতজ্বর নির্ণয় করা হলে একটি শিশুকে দীর্ঘদিন, বছরের পর বছর পেনিসিলিন ইনজেকশন বা বড়ি সেবন করতে হয়। চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো।

মুখ্য ও গৌণ উপসর্গ দিয়ে বাতজ্বর নির্ণয়ের ফর্মুলা

দুটি মুখ্য অথবা একটি মুখ্য উপসর্গের সঙ্গে দুটি গৌণ উপসর্গের উপস্থিতি থাকলে এবং এর সঙ্গে স্ট্রেপটোক্কাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রমাণিত হলেই কেবল বাতজ্বর হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। স্ট্রেপটোক্কাস সংক্রমণ প্রমাণ করতে এএসও টাইটার করা হয়।

মুখ্য উপসর্গ হলোÑ

এক. অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত ব্যথা ও ফুলে যাওয়া। একটি সন্ধি বা জয়েন্ট ভালো হয়ে গেলে অন্যটিকে আক্রমণ করে থাকে।

দুই. হৃৎপি-ের প্রদাহ বা কার্ডাইটিস হওয়া।

তিন. ত্বকের নিচে গোটা ও ত্বকের লালচে দাগ।

চার. স্নায়ু জটিলতায় পেশির অস্বাভাবিক চলন।

গৌণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ইসিজিতে বিশেষ পরিবর্তন, রক্তে ইএসআর বা সিআরপি বৃদ্ধি ইত্যাদি।

বাতজ্বর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

তীব্র বাতজ্বর চিকিৎসায় এসপিরিন বা Corticosteroids প্রদাহবিরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসপিরিন ১০০ মিলিগ্রাম উচ্চমাত্রায় ব্যবহার করা হয়। Strep সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত।Long acting পেনিসিলিন, মাসিক ইনজেকশন হিসেবে বাতজ্বর আক্রান্ত রোগীদের পাঁচ বছর আবার যাদের Carditis আছে, তাদের সারা জীবন থেরাপি নিতে হবে।

বাতজ্বর প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় Strep গলার সংক্রমণের চিকিৎসা নির্ধারিত মাত্রায় নিশ্চিতভাবে সমাপ্ত করা এবং সন্তানের ঘনঘন গলাব্যথা যেন না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক

এমএইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিক্যোল কলেজ, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist