নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

ঢাবির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছাপাখানার কর্মচারী!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই শিক্ষার্থীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিআইডির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গত ২০ অক্টোবর প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ আরো ১০ জনকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর নাটোর ও পাবনা জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান ইসামীকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে সিআইডির একটি বিশেষ দল। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রাকিবুলের দেওয়া তথ্যমতে গত বুধবার জামালপুর থেকে সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সাইফুলের দেওয়া তথ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড থেকে গ্রেফতার করা হয় খান বাহাদুর নামে এক যুবককে। সে ২০১০ সাল থেকে ইন্দিরা রোডের একটি ছাপাখানায় কাজ করছে। বিগত চার বছর ধরে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে। ওই ছাপাখানা থেকেই ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়।

সিআইডির এসএসপি মোল্যা নজরুল আরো জানান, বাহাদুরের মাধ্যমেই মূলত ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে চলে যেত সাইফুলের হাতে। তারপরই রাকিবুল হাসান ইসামী তা ভর্তীচ্ছুদের কাছে বিক্রি করত। খান বাহাদুরের সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল সাইফুলের। আর সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় ছিল রকিবুল হাসানের। খান বাহাদুরের ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপার বিষয়টি জানার পর সাইফুল এ নিয়ে রাকিবুলের সঙ্গে আলোচনা করে। এক পর্যায়ে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বাড়তি আয়ের চিন্তায় ভয়ংকর এ অপরাধের পরিকল্পনা করে। এরপর সাইফুল ও রাকিবুল ছাপাখানার কর্মচারী খান বাহাদুরের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র গড়ে তোলে। এ তিনজনে মিলে দীর্ঘদিন ধরে ঢাবির প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্যে, গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর জিগাতলা থেকে গ্রেফতার করা হয় নাজমুল হাসান নাঈমকে। পরে ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বনি ইসরাইল ও রাজশাহীর বিনোদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় মো. মারুফ হোসেনকে। এই বনি ও মারুফ দুজনই ভর্তি জালিয়াতির জন্য ছাত্র সংগ্রহ এবং রকিবুল হাসান ইসামীকে ছাত্রদের তথ্য সরবরাহ করত।

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের প্রায় সব সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করা একটি সামাজিক ব্যাধি। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকার ঘটনা সামাজিক ব্যাধি থেকে সামাজিক অবক্ষয়ে রূপ নিয়েছে। যারা এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিচ্ছে তারাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যালে ভালো ভালো বিষয়ে পড়াশোনা করছে। আর তারাই যদি পরবর্তীতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ আসনে উপনীত হয়, তাহলে রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আর চলতি বছর এই পরীক্ষা নিয়ে ডিজিটাল জালিয়াতি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ থেকে ৭ লাখ টাকার লেনদেন হতো। মোল্যা নজরুল জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন কারাগারে, তিনজন রিমান্ডে এবং দুজন গ্রেফতার আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist