নিজস্ব প্রতিবেদক
যেন একাত্তরের সেই ৭ মার্চ!
সমাবেশে কাদের সিদ্দিকী ও নাজমুল হুদা
যে স্থানটিতে দাঁড়িয়ে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দিশা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার সেই ভাষণের বৈশ্বিক স্বীকৃতি উদ্যাপনে সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুখর ছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে। যেন একাত্তরেই ফিরে গিয়েছিল দিনটি! সেদিনের সেই জনস্রোত দেখা গেল গতকাল শনিবার। সমাবেশে এসেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। সমাবেশ মঞ্চের সামনে সরকারদলীয় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাদের বসে থাকতে দেখা যায়।
কাদের সিদ্দিকী : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাদের সিদ্দিকী ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মতপার্থক্যের কারণে দল ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন তিনি। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের একজন কড়া সমালোচক। তবে বরাবরই তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার একনিষ্ঠ ভক্তির কথা প্রকাশ করে থাকেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ নামের একটি জোটও ঘোষণা করেন।
বিভিন্ন দেশের আরো ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকেও গত মাসের শেষে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে’ যুক্ত করে নেয় ইউনেসকো। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের এ স্বীকৃতি উদ্যাপনে এদিন নাগরিক কমিটির ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করা হয় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এদিকে সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। উদ্যানের চারপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
সমাবেশে যোগ দিতে শনিবার সকাল থেকে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিলের গন্তব্য ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশা এবং শিক্ষার্থীরাও জড়ো হয়েছেন সেখানে। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে মিছিল আসে। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে আসেন অনেকে। তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন। অনেকের গায়ে একই রঙের টি-শার্ট ও মাথায় একই রঙের ক্যাপ।
সমাবেশের কারণে ওই এলাকায় গাড়ির চাপ কমাতে রূপসী বাংলা হোটেল মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড়, জিপিও মোড়, গোলাপ শাহ মাজার, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মোড় এবং নীলক্ষেত মোড় এলাকায় মিছিলবাহী গাড়ি আটকে দিচ্ছে পুলিশ। ফলে এসব স্থান থেকে নেমে হেঁটে যেতে হয় উদ্যানে। শাহবাগ থেকে টিএসসি, নীলক্ষেত মোড় থেকে টিএসসি এবং হাইকোর্টের মাজার গেট থেকে দোয়েল চত্বর এলাকা ছিল মুখর মিছিলে মিছিলে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। উদ্যানের চারপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। কাকরাইল মোড় থেকে মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট মোড় হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের টিএসসি-শাহবাগ মোড় পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টেই ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। এসব এলাকায় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে সে জন্য যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ কেন্দ্র করে উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে চারপাশেই পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে মাঠে কাজ করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উদ্যানের আশপাশের এলাকায় পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করছে। কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হলেই তাকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সড়কের পাশে ও মাঝে জটলা সৃষ্টি না করার আহ্বানও জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এ সড়কগুলোতে যাতে যানবাহনের অহেতুক কোনো যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও কাজ করতে দেখা গেছে।
সাড়ে চার দশক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই (তখন নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান) ৭ কোটি বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
"