হাসান ইমন

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৭

সংস্কার শুরু উত্তরে দক্ষিণের খবর নেই

অতিবৃষ্টি, যখন-তখন খোঁড়াখুঁড়ি, সংস্কার-নির্মাণে অবহেলা ও অনিয়মের কারণে ছয় মাস ধরেই রাজধানীর সড়কগুলো বেহাল। অলিগলি থেকে শুরু করে অধিকাংশ প্রধান সড়ক এখন ভেঙেচুরে একাকার। সড়ক জুড়ে খানাখন্দ ও গর্ত। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক নিয়ে মানুষের দুর্ভোরগ এখন চরমে।

কথা ছিল বর্ষা মৌসুম শেষ হলে এসব সড়ক সংস্কারে হাত দেবে দুই সিটি করপোরেশন। বর্ষা শেষ হয়েছে তিন মাস হলো। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অনিয়মিত বৃষ্টিও নেই। সড়কগুলো এখন শুকনো খটখটে। অথচ দুই সিটি করপোরেশনের কেউ-ই সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সবেমাত্র কাজে হাত দিলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এখনো ব্যস্ত ফাইল চালাচালিতে। কবে নাগাদ এ সিটি করপোরেশন কাজে হাত দেবে, তা বলতে পারছে না করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন (স্বপন) বলেন, ‘এবারে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ডিএনসিসির ২৫ শতাংশ রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারের জন্য আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। সিটি করপোরেশন ও জিওবি প্রকল্পে ৬৫ শতাংশ রাস্তার কাজ চলমান। আর ৩৫ শতাংশ সড়কের জন্য অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারব।’

অন্যদিকে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এবারের অতিরিক্ত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ডিএসসিসির ২০-২৫ শতাংশ রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে কিছু সড়ক সংস্কার হবে। বাকিগুলো সংস্কারের জন্য থোক বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগির কাজ শুরু করতে পারব।’

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজধানীতে দুই হাজার ২৮৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসির আওতায় প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ও ডিএনসিসির রয়েছে এক হাজার ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের এলাকায় এবার ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক নষ্ট হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সড়ক সংস্কারের চিত্র বলছে, প্রতি বছর সংস্কারযোগ্য সড়কের পরিমাণে তেমন হেরফের হচ্ছে না, বরং প্রতি বছরই বরাদ্দ বাড়ছে। গত বছর দুই সিটি করপোরেশন ৫২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করেছে। চলতি বছর ৫১৯ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে দুই সিটির সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৮৩১ কোটি টাকা।

করপোরেশন সূত্র মতে, প্রতি বছর রাস্তার সংস্কারকাজের বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় করে দুই সিটি করপোরেশন। চলতি বছর ডিএসসিসির বাজেটের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন খাতে। বাজেটে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ছিল ৭০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। একইভাবে চলতি বাজেটে ডিএনসিসি সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন ব্যয় ধরেছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত অর্থবছরে দুই সিটির সড়কের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ এত টাকা ব্যয় করেও সড়কগুলো অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কগুলো ১০-১৫ টন ওজনের গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু সেখানে চলে ৪০-৫০ টন ওজনের গাড়ি। এতে সড়কগুলো ওজন সহ্য করতে না পেরে নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে বৃষ্টির পানি জমে থাকা পানিতেও সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

সময়মতো সংস্কার না করায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো এখন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের কার্পেটিং উঠে খানাখন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। বর্ষায় টানা বৃষ্টি হলে পানি জমে ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও এসব সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে এসব দিক বিবেচনা করে ডিএনসিসি সড়ক চিহ্নিত করে তা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব সড়ক কত দিন টিকবে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্বয়ং করপোরেশনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কারকাজ ও প্রভাবশালী ঠিকাদারদের বেপরোয়া তৎপরতার কারণে নগরীর রাস্তার সংস্কারকাজ বেশিদিন টিকছে না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা সড়ক বছর না পেরোতেই ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠলেও কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ শুরু না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হচ্ছে অনেক সড়ক। তাগিদ দিলেও ঠিকাদাররা তা আমলে নিচ্ছেন না।

সরেজমিনে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কের এখন বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে এলাকায় বেশির ভাগ শাখা সড়কই ভাঙাচোরা। খানাখন্দে ভরা খিলক্ষেত এলাকা। খিলক্ষেত রেলগেট-ডুমনী সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কচুক্ষেত, গাবতলীর আমিনবাজার থেকে সদরঘাট বাবুবাজার পর্যন্ত, ফুলবাড়িয়া মাজার থেকে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট চত্বর থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত, বিজয় সরণি পয়েন্ট থেকে আগারগাঁও ও মহাখালী থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ।

এ বিষয়ে দুই ডিসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, নগরীর সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো জলাবদ্ধতা। তা ছাড়া, হাইওয়ের রাস্তাগুলোয় যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, লোকাল রাস্তায় তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ তাতে একটি সড়ক সংস্কারে প্রচুর খরচ হয়। নগরীর রাস্তাঘাট পাঁচ টন ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী। কিন্তু ২০ টন ভারী যান চলাচল করছে। যেখানে এক শ গাড়ি চলাচলের উপযোগী সড়ক আছে, সেখানে চলছে পাঁচ শ গাড়ি। অতিরিক্ত যান ও ধারণক্ষমতার বেশি চলাচলের কারণেও রাস্তাগুলো সংস্কার করার পর আবার ভেঙে যাচ্ছে।

এদিকে রাতের আঁধারে নতুনবাজার, কালাচাঁদপুর, বাড্ডায় রাস্তার একপাশ বন্ধ করে, অন্যপাশে কাজ চলছে। দ্রুততার সঙ্গে ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কার করে চলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রগতি সরণিতে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সমানতালে কাজ করছেন রাস্তা সংস্কারে। প্রেভার মেশিনের সাহায্যে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে রাস্তা সংস্কারের কাজ। আশুলিয়া থেকে আনা গাড়িভর্তি নুড়িপাথর আর বিটুমিন দিয়ে চলছে কাজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist