পাঠান সোহাগ
সারা দেশে ২৩১৮ কিলোমটিার সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত
অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সারা দেশে দুই হাজার ৩১৮ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে এটি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। এই বিভাগের অধীনে মোট ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দুই হাজার ৩১৮ কিলোমিটারের হিসাব পাওয়া গেছে। এ বছরের নভেম্বরে সারা দেশের সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। তখন পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। অবশ্য এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের প্রাথমিক সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই সড়ক বিভাগের কাছে ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, বন্যায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলার এসব সড়কের পিচঢালাই উঠে গেছে। অনেক স্থানে ১২-১৫ ফুট এলাকা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। এসব গর্তে গাড়ির নিচের অংশের সঙ্গে রাস্তায় ঘষা লাগছে। এতে অনেক সময় গাড়ির স্প্রিংসহ যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু কিছু কালভার্ট ও ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সারা দেশের নয়টি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জেলার ২৫৫টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য সওজের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ে পাঠিয়েছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করতে জরুরিভিত্তিতে ১৯৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। আর গত বছর বন্যা এবং অতিবৃষ্টিজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে ১২০ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা চেয়েছিল সওজ।
সওজ সূত্রে আরো জানা যায়, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং সিলেট অঞ্চলে সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। সিলেট থেকে সড়ক সংস্কারের জন্য চাওয়া হয়েছে ৫২ কোটি ৪০ লাখ; যা অন্য বিভাগের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, রাজশাহীর সড়ক মেরামতে লাগবে ৩৭ কোটি ৬ লাখ, গোলাপগঞ্জের জন্য ৪৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার, ঢাকার জন্য ২ কোটি ১০ লাখ, ময়মনসিংহের জন্য ১২ কোটি ৮৪ লাখ, খুলনার জন্য ৩ কোটি ৫ লাখ, কুমিল্লার জন্য ৫০ লাখ, চট্টগ্রামের জন্য ২১ কোটি ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। সওজের প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার সড়কগুলোর হিসাব দেওয়া হয়নি।
এখন প্রাথমিকভাবে এই অর্থ চাওয়া হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান জানান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যেসব জায়গা বন্যায় ভেসে গেছে, সেসব জায়গা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ড্রেনেজ, কালভার্টসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু সঠিকভাবে করতে। বৃষ্টি মৌসুম শেষ হলে আমরা পর্যালোচনা করে দেখব, যেখানে পানির প্রবাহটা গেছে সেখানে ড্রেনেজে স্ট্রাকচার ব্রিজ-কালভার্ট করার প্রয়োজন আছে কি না? যদি থাকে তাহলে সে কাজ করার জন্য আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে।’
এবার বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি কি না-প্রশ্ন করা হলে প্রকৌশলী হাসান বলেন, প্রতি বর্ষায় এভাবে কিছু ক্ষতি হয়। কিন্তু এবার বন্যায় ক্ষতি বেশি হয়েছে। বহু জায়গায় সড়ক ধসে গেছে। রাস্তা টোটালি ওয়াশড আউট হয়ে গেছে বহু জায়গায়। মাঝখানে রাস্তা নাই, ব্রিজ দিতে হবে-এমন অবস্থাও হয়েছে। এজন্য আমাদের বাড়তি মেরামতকাজ করতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের ১০ জেলার ৬২৯ কিলোমিটার সড়ক। এই ১০ জেলায় সড়ক রয়েছে ২ হাজার ৮৩৬ দশমিক ৯২ কিলোমিটার। এতে সড়ক আছে ১২১টি। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ১০টি, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১৩টি ও জেলা সড়ক রয়েছে ৯৮টি। রংপুর জোনের ১০ জেলায় ৬২৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যায় রংপুর জেলার সাতটি সড়কের ৭৭ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় ছয়টি সড়কের ৪১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, লালমনিরহাট জেলায় আটটি সড়কের ১১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বগুড়া জেলায় দুটি সড়কের ১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, গাইবান্ধা জেলায় আটটি সড়কের ৫৯ দশমিক কিলোমিটার, জয়পুরহাট জেলায় চারটি সড়কের ২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, দিনাজপুর জেলার ২৫টি সড়কের ১৩৫ কিলোমিটার, ঠাকুরগাঁও জেলার সাতটি সড়কের ৩৮ কিলোমিটার, পঞ্চগড় জেলায় পাঁচটি সড়কের ২৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার ও নীলফামারী জেলার ১১টি সড়কের ১২৬ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রংপুর জোনের অধীন ১০ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফকির আব্দুর রব জানান, এবারের বন্যায় রংপুর জোনের অধীনে ১০ জেলায় ৭৩টি সড়কের ৬২৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ১৭১ কিলোমিটার, পানির তোড়ে ভেসে গেছে ৯৫৫ মিটার।
"