নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

র‌্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গি কমান্ডার!

সুদর্শন যুবক মেহেদী হাসান (২৯)। রাজধানীর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করে ব্যবসা শুরু করেন। ছাত্রজীবনে মেহেদী নামে মডেলিং করত। একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গিবাদে। দায়িত্ব পায় জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনীর কমান্ডার হিসেবে। নাম পরিবর্তন করে ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নামে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। তার ব্রিগেড ‘আদ্-দার-ই-কুতনী’ এতটাই অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন করেছে, যে কোন স্থানে নাশকতা করার জন্য সক্ষম ছিল। তবে তার আগেই র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় মেহেদী হাসান।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। এর আগে বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মুঠোফোন, একটি পাসপোর্ট, উগ্রবাদী বইসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। মেহেদীর বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানা ও বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, মেহেদীর বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। তার বাবা খোরশেদ আলম পুলিশের একজন অবসরপ্রাপ্ত এএসআই। মেহেদী ২০১৫ সাল থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। গত বছর র‌্যাবের অভিযানকালে পালাতে গিয়ে নিহত হন জেএমবির তখনকার আমির সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ, যিনি তামিম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে জেএমবির নতুন অংশটিকে সংগঠিত করেছিল। সারোয়ারের বাসায় পাওয়া আলামত থেকে এই সংগঠনের দুটি ‘সামরিক ব্রিগেড’ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ হলি আর্টিজান বেকারিসহ বিভিন্ন হামলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’ গোপনে কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘বদর স্কোয়াড’ দুর্বল হয়ে গেলে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’ সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব কর্মকর্তারা জেএমবির এই ব্রিগেডের বিষয়ে নতুন তথ্য পায়। তখনই জানা যায়, ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নামের এক নেতার নেতৃত্বে ওই ব্রিগেড নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহত জঙ্গি নিবরাসসহ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গির সঙ্গে মেহেদীর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি সদস্যদের শপথ দিত এবং এর ভিডিও বিভিন্ন উগ্রবাদী চ্যানেলে প্রচার করত। সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ ও সাংগঠনিক বিয়ের ব্যবস্থার দিকটিও সে দেখাশোনা করত।

র?্যাবের দাবি, জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’র কমান্ডার এই মেহেদী হাসান। তার সাংগঠনিক নাম ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাজাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম খোরশেদ আলম। মেহেদী ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। মডেলিংয়ে তিনি মেহেদী নামে পরিচিত ছিলেন। বনানী থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। একই আইনে উত্তরা পশ্চিম থানার আরেকটি মামলার তদন্তে নাম এসেছে তার। তবে মেহেদীর পরিবারের দাবি, গত ৪ মে থেকে মেহেদী নিখোঁজ আছেন। তার সন্ধান পাওয়ার জন্য খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। মেহেদীর বাবা খোরশেদ আলম পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান।

মেহেদীর বড় ভাই ওয়ালিউর আলম জানান, ৪ মে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন মেহেদী। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। জিডি করার পর থানা ও র?্যাব-৩ কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মেহেদীর কোনো সন্ধান থানা-পুলিশ কিংবা র?্যাব থেকে তাদের দেওয়া হয়নি। মেহেদীর জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িত হওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই দাবি করে ওয়ালিউর আলম বলেন, মেহেদী বিয়ে করেছেন ঢাকার এক মেয়েকে। তার স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী সবার ছোট। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় মডেলিংয়ের চেষ্টা করেন তিনি। তবে পরিবার থেকে এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। একসময় পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে খেলনাসামগ্রী কিনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে চকলেট এনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। মূলত ব্যবসা করতেন তিনি। এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকালই বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist