হাসান ইমন

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মিলমালিকদের আশ্বাসের দ্বিতীয় দিনেও কমেনি চালের দাম

অবৈধ মজুদ ঠেকাতে অভিযান অব্যাহত * খোলাবাজারের চাল কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ কম

বিদেশ থেকে সরকারের চাল আমদানি, বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়াতে শুল্ক কমানো, বিভাগীয় ও জেলা শহরে খোলাবাজারে চাল বিক্রি এবং মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠকসহ সরকারের নানা উদ্যোগের প্রতিফলন দেখা যায়নি চালের বাজারে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রীদের কাছে মিলমালিকরা দাম কমানোর আশ্বাস দিলেও কমেনি চালের দাম। ফলে বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে সর্বসাধারণকে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে দাম কমবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। তারা মনে করছেন, নতুন চাল এসেছে, এবার স্টকের চাল শেষ হলেই দাম কমবে। এদিকে খোলাবাজারে আতপ চাল বিক্রি শুরু হলেও, ওই চাল কিনতে ক্রেতাদের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ক্রেতারা বলছেন, তারা আতপ চালে ভাত খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই পরিবর্তন করে সিদ্ধ চাল দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে চালের মজুদ ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল বুধবার ঢাকার বেশ কয়েকটি চালের আড়ত ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পর কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে যাওয়া চালের দাম এখনো কমেনি। গত মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে মিলমালিকদের বৈঠকে চালের দাম কমানোর অশ্বাস দিলেও গতকাল পর্যন্ত চালের দাম কমেনি। পাইকারি বাজারে দাম দু-এক টাকা কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব একদমই পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা এখনো মোটা চাল ৫২-৫৪ এবং সরু চাল ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাইকারি চাল বিক্রেতা কারওয়ান বাজারের মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের কর্ণধার এম এ রাহয়ান জগল বলেন, বাজারে চালের দাম কমতির দিকে। এর পেছনে দুটি কারণ। একদিকে সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রি, অন্যদিকে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান পরিচালনা। এ অভিযান অব্যাহত থাকলে চালের দাম দু-তিন দিনের মধ্যেই সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন পর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা এবং বিনা পুঁজিতে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরা প্রচুর চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন। আবার সরকারিভাবেও লাখ লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে। নতুন করে এলসি খোলা চাল এখনো দেশের বাজারে না এলেও আগেই যারা ভারত থেকে চাল আমদানির এলসি খুলেছিলেন এবং বিভিন্ন স্থল ও নৌবন্দরে যেসব চাল খালাসের অপেক্ষায় ছিল, শুল্ক কমানোর পর এসব চাল ত্বরিত গতিতে খালাস করা হয়েছে। ঈদের আগে মোটা চালের ওপর দামের প্রভাব পড়লেও ঈদের পর আবার বেড়ে যায়। তবে গত মঙ্গলবার মিলমালিকদের এমন আশ্বাসের প্রভাবে পাইকারি বাজারে দাম ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে খুচরা বাজারেও পড়বে।

মহাখালী কাঁচাবাজারে গতকাল মোটা চাল বিআর-২৮ কেজিপ্রতি ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগেও এসব চাল ৪২-৪৩ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। এ ছাড়া গুটি ও স্বর্ণা কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরু চাল মিনিকেট বা নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, মিলমালিক ও পাইকারি আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। সরকার যদি দুই মাস আগে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিত তাহলে সিন্ডিকেটকারীরা জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নিতে পারতেন না। হঠাৎ করে চালের দাম পড়ে যাওয়ায় আগে বাড়তি দামে কেনা চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান খুচরা বিক্রেতারা। তাদের দাবি, কেউ লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করবে না। এ কারণেই দোকানে থাকা চাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কমবে না বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল। যখন এই পণ্যের দাম বাড়তে থাকে তখন ভুগতে হয় দেশের প্রতিটি মানুষকে। বাস্তবতা হচ্ছে, লাগাতারভাবে চালের দাম বাড়ছে। যে হারে চালের দাম বাড়ছে এতে বুঝতে হবে নিশ্চয় এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। সরকারের বর্তমান উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবৈধ আড়তদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এর ফলে চালের দাম ফের সহনীয় পর্যায়ে আসবে। এদিকে চালের দাম কমাতে রোববার দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু করে সরকার। সেই সঙ্গে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে। তবে খোলাবাজারে আতপ চাল কিনতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা।

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, সরকার নিয়ন্ত্রিত ওএমএসের কেন্দ্রগুলোয় সরবরাহকৃত আতপ চাল পরিবর্তন করে সিদ্ধ চাল বরাদ্দের দাবি ক্রেতাদের। এ অঞ্চলের মানুষ আতপ চাল খেতে অভ্যস্ত না হওয়ায় এ চাল পরিবর্তনের পাশাপাশি আটা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে বললেন জেলা প্রশাসক। খোলাবাজারে চাল কিনতে এসে অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ডিলাররা। ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকার ডিলার মীর আবদুল জলিল। ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দিনে দুই টন চাল বরাদ্দ পেলেও বিক্রি করেছেন মাত্র তিন শ কেজি চাল।

খোলাবাজারে চাল কিনতে এসে মো. রফিক বলেন, ‘কম দামে চাল কিনতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি আতপ চাল। আতপ চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত না। তাই আর কিনলাম না।’ অন্যদিকে অবৈধ চালের মজুদ ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকালও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, বেশি দামে চাল বিক্রি করার অভিযোগে গতকাল রাজবাড়ীর পাংশায় পাঁচ চাল ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দ-প্রাপ্তরা হলেন অমল কুন্ডুু তুহিন ম-ল, সুকুমার কুন্ডুু, বিকাশ কুন্ডুু ও তপন কুন্ডুু। রাজবাড়ীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার শাহ মো. সজীব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিনি জানান, ভোক্তা সংরক্ষণ আইনের ২০০৯(৩) ধারা অনুযায়ী মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, চাল কেনার রসিদ দোকানে না রাখা ও বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করায় প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে প্রত্যেক চাল ব্যবসায়ীকে দুই হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist